নিজস্ব প্রতিবেদক: সে কিশোরী। সাজতে ভালবাসে। তার আরও শখের চুল। তার পরিচর্যাতেই মেতে থাকত। অতিমারি শুরু থেকে বছর দুই সে বুঝেছিল, মানুষদের পাশে মানুষকেই দাঁড়াতে হবে। কারণ, একসঙ্গে না থাকলে মানুষ বড় অসহায়। আর তা থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সুযোগ পেলে মানুষের পাশে দাঁড়াবে সে। তাই করে দেখাল কিশোরী আদৃতা। নিজের প্রিয় চুল কেটে উপহার দিল ক্যান্সার আক্রান্তদের। তার কাজের জন্য তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে শহর। আদৃতার বাড়ি মেদিনীপুরে।
বয়স ১২ কী ১৩। ডিএভি পাবলিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আদৃতা। লকডাউনে সংক্রমণের ভয়ে যায়নি পার্লার। তখনই ভেবেছিল চুল বড় করে তা উপহার পাঠাবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য। কারণ, ওদের যে চুল (Hair) উঠে যায়। ওদেরও তো তাতে কষ্ট হয়। ইচ্ছে হয় সাজতে। সেই চুল উপহার দেওয়ার ইচ্ছে আরও বেড়ে যায় প্রিয় মাসিমনিকে দেখে। পাশের জেলা ঝাড়গ্রামের শিক্ষিকা সুজাতা ভট্টাচার্য তার মাসি। মাসিও ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন চুল। তারপরেই আদৃতা খোঁজ শুরু করে কীভাবে দেওয়া যাবে নিজের চুল। পাঠাবেই বা কী করে? এরপরেই শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে জানতে পারে মুম্বই-এর ‘মাদার’ ট্রাস্টের কথা। যোগাযোগ করার পর নিজের প্রিয় লম্বা চুল কেটে ফেলে সে। এরপর সুন্দর করে দুটি বিনুনি করে। আর তা খামবন্দি করে কুরিয়র করে দেয় সেই সমাজসেবী সংগঠনের ঠিকানায়।
ক্যান্সার (Cancer) আক্রন্তদের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি করা হয়। আর তাই উঠে যায় চুল। তাঁদের জন্যই পরচুলা তৈরি করা হয়। আর সেই পরচুলা তৈরির জন্যই নিজের চুল উপহার দিল শহরের আদরের মেয়ে। অবশ্য মিষ্টি মেয়ে এখানে একটু কড়া। তার স্পষ্ট কথা, ‘এটা দান নয়, উপহার। আমায় যেমন বন্ধুরা গিফট দেয় তেমনই। আরও বলে, ‘বন্ধুরা কিছু দিলে সেটাকে দান বলতে নেই’।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আদৃতা। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর (Midnapore) শহরের গোলকুয়ায়। বাবা পেশায় ঠিকাদার, মা গৃহবধূ। প্রতি বছর তার জন্মদিনে আয়োজন করা হয় রক্তদান শিবিরের। এমনকি সমাজসেবার কাজেও যুক্ত মা সুচন্দ্রা। বাবা জয়ন্ত বলেন, মেয়ে ১৩ ইঞ্চি চুল উপহার (Gift) পাঠিয়েছে ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য।
কিশোরীর এই কাজ শহরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আর আদৃতা চায়, তার মতই সকলে ‘বন্ধু’ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াক। ছোট্ট মেয়েকে কুর্নিশ জানাচ্ছে শহর।