নিজস্ব প্রতিনিধি: তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল বিস্তর অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যত দুর্নীতির আখড়া করে বানিয়ে ছেড়েছেন উপাচার্য(VC), এমন দাবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল পড়ুয়াদের আন্দোলনও। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণ কাজের জন্য বহু মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করা হলেও তার কোনও হিসাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা অনিয়মিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে কোনও দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। মোট প্রায় প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল উপাচার্যের বিরুদ্ধে। এই সব নিয়ে কথা বলতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C V Anand Bose) তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এক বৈঠকে। কিন্তু সেই বৈঠকে হাজিরা দেননি উপাচার্য। আর তার জেরেই রাজ্যপালের(Governor) রোষে পড়েন উপাচার্য। বরখাস্ত হলেন তিনি। নজরে পশ্চিম বর্ধমান(Paschim Burdhwan) জেলায় থাকা কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের(Kazi Nazrul Islam University) উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী(Sadhan Chakrabarty)।
আরও পড়ুন মমতা সরকারের নয়া উদ্যোগ Women’s Employment Platform
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য গত ১৪ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল। সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদেরও একটা বড় অংশ। তাঁরা উপচার্যের অপসারণও দাবি করেন। সেই আন্দোলন ও দাবিদাওয়াগুলিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার। তার জেরে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারকে তাঁর পদে বহাল করা হয়। আন্দোলন চলাকালীন অচলাবস্থা কাটাতে বেশ কয়েক বার উদ্যোগী হন উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। আন্দোলকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও সমাধানসূত্র মিলছিল না। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতেই অনড় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন তিনি। শেষমেষ আদালতের দ্বারস্থ হন সাধন। আদালত নির্দেশ দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে ধর্না নয়, ধর্না দিতে হবে ক্যাম্পাসের বাইরে। মূল প্রবেশদ্বার থেকে ৫০ মিটার দূরে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে, পুলিশের সহযোগিতায় নিজের কার্যালয়ে ঢুকতে পারেন সাধন। এত কিছুর পরেও নিজের পদ বাঁচাতে পারলেন না সাধন। আন্দোলনের ৬০ দিনের মাথায় আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে তাঁকে উপাচার্যের পদ থেকে অপসারিত করলেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন কর্ণাটকে ঔদ্ধত্য-অহঙ্কারের রাজনীতির বিপক্ষে ভোট হয়েছে: মমতা
জানা গিয়েছে, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীদের বৈঠকে ডেকেছিলেন পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে থাকা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সেই বৈঠক ছিল গতকাল অর্থাৎ শনিবার নদিয়া জেলার কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীরা হাজির ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারও। কিন্তু হাজির ছিলেন না সাধন যা রাজ্যপাল মোটেও ভাল ভাবে নেননি। এরপরে রাতেই রেজিস্ট্রারের কাছে এসে পৌঁছয় রাজভবনের বার্তা। সাধনকে বরখাস্ত করেছেন রাজ্যপাল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার জানিয়েছেন, ‘উপাচার্যকে বরখাস্ত করার নির্দেশ হাতে পেয়েছি।’ যদিও বরখাস্ত হওয়া উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।