নিজস্ব প্রতিনিধি,হাড়োয়া: বিদ্যাধরীর তীরে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা মণ্ডপ ও পীর গোরাচাঁদের মাজার শরীফ উভয় সম্প্রদায়ের হাতে পুজীত হন দেবী দুর্গা।বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে সম্প্রীতির অনন্য নজির হাড়োয়াতে।উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া ব্লকের(Haroa Block) হাড়োয়া বাজার কমিটির উদ্যোগে ৭৯ বছরে দুর্গাপুজো পা রাখল। এখানে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা মন্দির। আর ঠিক তার পাশে রয়েছে পীর গোরাচাঁদের মাজার শরীফ। তাই একে অপরের বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে প্রাচীন সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। মাজার শরীফ অনুষ্ঠানে যেমন হিন্দু সম্প্রদায় মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাঁধে কাধ রেখে ঔরস উৎসব পালন করেন।
ঠিক দুর্গা পূজার সময়, মুসলিম সম্প্রদায় মুসলিম ভাইরা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আনন্দে মাতেন। এমনকি উৎসবের মূল কমিটিতে মুসলিম ভাইরা রয়েছেন ।দুর্গাপুজো(Durga Pujp) শুদ্ধ আচার উপচার নিষ্ঠা মধ্য দিয়ে যাতে পুজীত হন দেবী দুর্গা তার সব রকম ব্যবস্থা করেন তারা। মুসলিম সম্প্রদায় মানুষ প্রতিবছরের মতো এ বছরও হাড়োয়া বাজার কমিটি উদ্যোগে দুর্গাপুজায় সেই ছবি দেখা গেল। বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে দুর্গাপুজোর উৎসবের মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজোর কমিটির সদস্য শাহনাওয়াজ মোল্লা বলেন, হাড়োয়ার সম্প্রীতির সংস্কৃতি মেলবন্ধনের মাটি। একে অপরের মধ্যে সংস্কৃতি কৃষ্টি জড়িয়ে রয়েছে। হিন্দু ভাইরা যেমন ঈদের সময় মাজার শরীফের অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আনন্দ উৎসব মাতেন ,আমরা ঠিক দুর্গা পুজোর সময় তাদের এই পাঁচ দিন পাশে থেকে দেবী দুর্গার আরাধনায় মিলিত হই।
এখানে কোন ভেদাভেদ বিভাজন নেই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে একাকার। দুর্গা পুজো কমিটির সদস্য রাজকুমার দে বলেন, এ মাটি উভয় সম্প্রদায়ের মাটি ।বাবা পীর গোরাচাঁদের মেলার সময় আমরা সেখানে সমস্ত কাজের অংশীদার হই। এখানে কোন জাতি ভেদাভেদ নেই। একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব আলিঙ্গন ও মিষ্টিমুখের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিটি উৎসবে সবাই এক জায়গায় করি। অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী বলেন, সম্প্রীতি সংস্কৃতি বেঁচে থাক এটাই বলব হাড়োয়ার মত জায়গায় এখনো দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের উৎসবে মিলিত হয়ে যে সম্প্রীতি সংস্কৃতির পুজোয় মিলিত হন সুন্দরবন তথা বাংলার মাটি তা আরোও একবার প্রমাণিত করল। পুজোর কটা দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চ নাচ-গান যাত্রা এমনকি বিচিত্রার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দুর্গা পূজার পাঁচ দিন মিলিত হয়।
হাড়োয়ার মানুষ এই সম্প্রীতির দুর্গা পুজো দেখতে রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন্ন রাজ্যের থেকে বহু দর্শনার্থীরা বিদ্যাধরী নদীর পারে ভিড় জমান। উপস্থিত ছিলেন হাড়োয়া সার্বজনীন পূজা কমিটি সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র তালুকদার ,সম্পাদক চিত্তরঞ্জন মুখার্জি, সহ-সভাপতি দীপক সেন, সদস্য প্রবীরচন্দ্র পাল এবং রাজকুমার দে । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবীরা। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী এবং শিকরাকুলিন গ্রামের মহারাজ।