নিজস্ব প্রতিনিধি: জীবনের যে কোনও পরীক্ষায় ফেলের পরে, নতুন করে যে ফের শুরু করা যায়, সেটাতেই বিশ্বাস রাখেন না সমাজের সিংহ ভাগ মানুষ। কিন্তু সেই বিশ্বাসেই জোর ধাক্কা দিলেন দেশেরই এক যুবক। ঘটনাচক্রে সে এখন আবার এই বাংলাতেই(Bengal) এক জেলার পুলিশ সুপার(Police Super)। যে ছেলেটা একদিন উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে ফেল করে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাবার দুধের ব্যবসায় ঢুকে পড়েছিল, সেই ছেলেটাই IPS Officer হয়ে এখন উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জলপাইগুড়ি জেলার(Jalpaiguri District) পুলিশ সুপার। উমেশ গণপত খণ্ডবহালে(Umesh Ganpat Khandbahale), এই নামটাই এখন বাংলার অনেকের ছেলেমেয়ের কাছে অনুপ্রেরণার নয়া মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহারাষ্ট্রের নাসিক শহরের কাছে থাকা মাহিরাভনি গ্রামের ছেলে উমেশ। উচ্চমাধ্যমিকে ব্যাক। কারণ ইংরেজিতে এসেছিল মাত্র ২১ নম্বর। তাই পড়াশোনাতেও ইতি টেনে দিয়েছিলেন উমেশ। বাবা গণপত খণ্ডবহালে দুধ বিক্রেতা। পাশাপাশি চাষবাষের কাজও করতেন। উচ্চমাধ্যমিকে ব্যাক পেয়ে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাবার দুধের ব্যবসাকেই বড় করতে শুরু করেন উমেশ। গ্রাম থেকে রোজ দুধ নিয়ে বিক্রি করতে যেতেন নাসিক বাজারে। যেতে-আসতে রোজই উমেশের চোখে পড়ত রাস্তার পাশে মহারাষ্ট্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হোর্ডিং। মন থেকে তখনও পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়াটা মেনে নিতে পারেননি উমেশ। তাই একদিন সেখানেই ভর্তি হয়ে গেলেন তিনি। প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক, তারপর কৃষিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক এবং শেষে ইংরেজিতে এম এ। সেই এম এ করতে করতেই দিল্লি যাত্রা। লক্ষ্য ছিল IAS Officer হওয়া। সেখানেও রূপকথা। প্রথম দু’বারে অকৃতকার্য। তৃতীয়বারের চেষ্টায় পাশ। সেটাও IPS Officer হিসাবে।
২০১৫ সালে UPSC পরীক্ষায় পাশ করে শুরু হয় IPS Officer হয়ে ওঠার ট্রেনিং। তারপর ২ বছর করে মহকুমা পুলিশ শাসকের কাজ। শেষে ২০২৩ সালে বাংলায় জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে পোস্টিং। উমেশের জীবন আজ তাই অনেকের কাছেই রূপকথার মতো। জীবনে পড়ে গিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। জেদ থাকলে যে সব কিছুই করে দেখানো সম্ভব সেটাই করে দেখিয়েছেন উমেশ। যে কড়া মনোভাবে নিজেকে সমাজের স্রোতে ভেসে যেতে দেননি, সেই কড়া মনোভাব নিয়েই এখন জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন উমেশ।