নিজস্ব প্রতিনিধি: টানা ৫ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরে রবিবার সকালে প্রত্যাহার করে নেওয়া হল কুড়মি আন্দোলন(Kurmi Protest Movement)। এদিন দুপুরের মধ্যেই সব জায়গা থেকে অবরোধ বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের তরফে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আর এই আন্দোলন প্রত্যাহার কার্যত বলে দিচ্ছে বাংলায় জঙ্গলমহলের(Junglemahal) বুকে জনজীবন আবারও স্বাভাবিক হতে চলেছে দ্রুত।
আরও পড়ুন উত্তরের মাটি ধরে রাখতে ৫ ব্রহ্মাস্ত্রে বাজি মোদির
বাংলায় বসবাসকারী কুড়মিদের তপশিলী উপজাতির তকমা(ST Tag) দিতে হবে এই দাবিকে সামনে রেখেই গত দেড় বছর ধরে আন্দোলনে নেমেছে কুড়মি সমাজ। দফায় দফায় তাঁরা জঙ্গলমহলের বুকে বিক্ষোভ অবরোধ আন্দোলন চালিয়েছে। তাঁদের সেই আন্দোলনের জেরে বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে জঙ্গলমহলের জনজীবন। বার বার ধাক্কা খেয়েছে রেল যোগাযোগ, রেল চলাচল এবং জাতীয় সড়কে যান চলাচল। এবারেই সেই একই কায়দায় টানা ৫দিন অবরোধ চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। আর তার জেরে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে। ৫০০’র বেশি লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে এই আন্দোলনের জেরে। একই সঙ্গে আন্দোলনের জেরে কুড়মিদের বিরুদ্ধে ক্রমশ ক্ষোভ মাথাচাড়া দিচ্ছিল জঙ্গলমহলের বুকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এদিন আন্দোলন প্রত্যাহারের বার্তা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা অজিত মাহাতো(Ajit Mahato) ।
আরও পড়ুন পরিস্থিতির শিকার ১৪ হাজার চাকরি প্রার্থী, ভাঙছে ধৈর্যের বাঁধ
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে হুট করে এই আন্দোলন প্রত্যাহার কেন? সূত্রে দাবি, রাজ্যের তরফে আন্দোলনকারীদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে। কিন্তু এদিন আন্দোলন প্রত্যাহার করে অজিত মাহাতো জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যের প্রস্তাব প্রত্যাখান করছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। আন্দোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এই অবরোধ বিক্ষোভ প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করবেন। পুরুলিয়ার কুস্তাউরে অবরোধ তোলা হলেও তাই খেমাশুলিতে অবরোধ তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, নানা চাপের জেরেই আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হচ্ছে। গোটা আন্দোলনটাই গেরুয়া শিবিরের অঙ্গুলিহেলনে চলছে। লক্ষ্য একটাই যেনতেন প্রকারণে জঙ্গলমহল ও বাংলাকে অশান্ত করে তোলা যাতে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটানো যায়। একই সঙ্গে কুড়মি সমাজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়। সেই সুর মিলেছে অজিত মাহাতোর গলায়। তিনি বলেছেন, তাঁরা কোনও দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নন, কিন্তু তাঁরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাবেন। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা আদতে মমতা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন Bank Account Aadhar Link বাধ্যতামূলক লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে
সব থেকে বড় কথা এদিন সকালেই অজিতবাবুই সংবাদমাধ্যমের কাছে অজিতবাবু দাবি করেছিলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না বরঞ্চ এদিন থেকে আরও নতুন নতুন জায়গায় অবরোধ শুরু করা হবে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই ইউটার্ন কেন? ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, গেরুয়া শিবির এই আন্দোলনকে পিছন থেকে পরিচালিত করছে। তাঁরাই আদতে এই আন্দোলনের মাথা। তাঁদের হাতেই তৈরি হয়েছে আন্দোলনের ব্লু প্রিন্ট। সবটাই করা হচ্ছে বাংলা ও জঙ্গলমহলকে অশান্ত করে তোলার লক্ষ্যে এবং জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিচালিত সরকার এবং বাংলাকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে। সূত্রে জানা গিয়েছে রেল রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল বলপ্রয়োগ না করলে আন্দোলনকারীরা রেললাইন থেকে সরবে না এবং ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক হবে না। তাই রাজ্য যেন বলপ্রয়োগ করে। আদতে এই সিদ্ধান্তও যে গেরুয়া শিবিরে তৈরি হওয়া ব্লু প্রিন্টেরই অংশ। রাজ্য বলপ্রয়োগ করবে এবং সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যজুড়ে অশান্তি ছড়াবে গেরুয়া শিবির। আসবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে রাজনীতির ফায়দা লুটবে। কিন্তু মমতার ধৈর্য্য সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে। উল্টে আন্দোলনের জেরে একাধিক রাজ্যে রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় এখন কুড়মিদের বলা হয়েছে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে।
