নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের(North Bengal) কোচবিহারের(Coachbehar) মাটিতে দাঁড়িয়ে বাম(Left)-বিজেপিকে(BJP) নিশানা বানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। একদিকে তিনি যেমন সেখান থেকে প্রশ্ন তুলেছেন বাম জমানার ৩৪ বছরে কোচবিহার জেলার কোন উন্নয়ন হয়েছে তেমনি প্রশ্ন তুলেছেন উনিশের লোকসভা ভোটে কোচবিহার থেকে জেতা বিজেপি সাংসদ জেলার উন্নয়নের জন্য কী করেছেন। একই সঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর সরকারের আমলে জেলার কোন কোন উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর সরকার জেলার মানুষদের উন্নয়নে কী কী করেছে। কার্যত মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার জেলার জনতাকে বুঝিয়ে দিলেন, ২৪’র ভোটে তাঁরা যেন আর ধর্ম, ভাষা, সম্প্রদায় দেখে ভোট না দেন। তাঁরা যেন ভোট দেন উন্নয়নকে সামনে রেখে।
এদিন মমতা কোচবিহার শহরের রাসমেলার মাঠে সরকারি পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে কী করি না আমরা। ধূপগুড়ি সাব ডিভিশন চেয়েছিল, করে দিয়েছি। কোচবিহারকে হেরিটেজ টাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কোচবিহার রাজবাড়িকে সম্মান জানিয়ে মেডিকেল কলেজের নাম রাখা হয়েছে। ২৫ একর জমি আমরা দিয়েছি। ছিটমহল হস্তান্তর করে দিয়েছি, কোচবিহার বিমানবন্দর করে দিয়েছি ৩০০ কোটি টাকায়। হলদিবাড়ি মেখলিগঞ্জের মধ্যে জয়ী সেতু করেছি। ৩৪ বছর বামফ্রন্ট ছিল কিছু করেছে? কোচবিহারের মানুষকে দেখত? আগেরবার বিজেপির সাংসদ জিতল, কী করেছে? কিছুই করেনি। আমি করে দিলাম এয়ারপোর্ট আর বাবু প্লেন চরে এসে বলছে আমি করেছি? জমিদার বাবু? যখন রেল মন্ত্রী ছিলাম তখন কোচবিহারের নতুন রেল স্টেশন কে করেছিল? যোগীগোপা ময়নাগুড়ি ভায়া কোচবিহারে লাইন কে করেছিল? চাংড়াবান্ধা, মালবাজার, জলপাইগুড়ি স্টেশন করেছিল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? ওরা তো একদিন ঘাস পুঁতেও দেখেনি, ঘাস কীভাবে পুঁততে হয়! দেখবেন এরা টিভিতে বলছে, ‘হাম নে ঘর ঘর মে জল দিয়েছি’! আপনারা কত টাকা দিয়েছেন? আমি বলি, কত টাকা দিয়েছেন? ২৫ শতাংশ দিয়েছে। আর বাকি আমরা দিয়েছি। তাহলে দিলটা কে বেশি? জমি নিনে দিচ্ছি, দেখভাল করছি আমরা, তৈরি করছি আমরা আর দালালি করে টিভিতে বিজ্ঞাপণ দিয়ে বলছে আমরা করছি। একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না। আমি তিন থেকে চার বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। বাংলা আবাস যোজনা। আমরা অর্ধেক দিই, ওরা অর্ধেক দেয়। সেই টাকাও জিএসটি দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এখন সেটাও বন্ধ। পথশ্রীতে ১২ হাজার রাস্তা করেছি। আরও ১২ হাজার গ্রামীণ রাস্তা হবে পথশ্রীতে।’
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ৫০০ কোটি টাকার ১৯৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন শিলন্যাস করা হল। মহাবীর ১৫ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি ১ কোটি টাকা খরচ করে করেছি, সেটা উদ্বোধন হল। মাথাভাঙা আর শীতলকুচি এলাকার রাস্তায় উন্নয়নের জন্য ২৯ কোটি টাকা. গোপালপুরে কমিউনিটি হ্লের জন্য ১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার, গ্রামীণ রাস্তা, কমিউনিটি হল, ক্ষুদ্র শিল্প প্রকল্পে টাকা দেওয়া হয়েছে। দিনহাটা গোঁসাইমারি রাস্তা ১৬ কোটি টাকা খরচ করে করা হচ্ছে। মেখলিগঞ্জ চ্যাঙড়াবান্দা রাস্তার জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ চাষিকে ১০২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে বাংলার সহায়তা কেন্দ্র চলছে। কারোর কাস্ট সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে ১২ তারিখ পর্যন্ত স্টেশনে আধিকারিকরা থাকছেন। সেখানে চলে যান। ওখানে পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিওরাও থাকবেন। রাজ্যে অনেকগুলো ইকোনমিক করিডর তৈরি হবে। সেখানে অনেক ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। ডালখোলা থেকে কোচবিহার একটা নতুন ইকোনমিক করিডোর হচ্ছে। এতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অনেকগুলো ছোট ছোট রাজবংশী স্কুল ছিল। কিন্তু সেগুলোর একটাও গর্ভমেন্টের মাইনে পেত না। নিজেরা লোকালি চালাত। তারা কোনও সুযোগ পেত না। আজকে ১০টা রাজবংশী স্কুলকে রাজ্য সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে গেলাম। নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন করে দিয়েছি। গোর্খা ব্যাটেলিয়ন, জঙ্গলমহল ব্যাটেলিয়ন করে দিয়েছি। আমি বাংলা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৪০ শতাংশ একশো দিনের কাজ করেছি। রাজবংশী, কামতাপুরী ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে কে, উদ্বাস্তু কলোনীতে পাট্টা দিয়েছে কে, মতুয়া ঠাকুর বাড়ি করে দিয়েছে কে, জল্পেশ মন্দির করে দিয়েছে কে? ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে শেষপর্যন্ত জিরো হয়ে গেল। ওসব আমি করি না।’