নিজস্ব প্রতিনিধি: সদ্য সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) দিনক্ষণ ঘোষিত হয়েছে। মাত্র ২ দিন হল মনোনয়ন গ্রহণের পর্ব শুরু হয়েছে। অথচ এর মধ্যেই রাজ্যের একের পর এক জেলায় একতরফা ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দিচ্ছে বামেরা(Leftfront)। প্রথমে পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর, তারপর উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলি। এবার সেই তালিকায় জুড়ে গেল মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার নাম। যে জেলা প্রদেশ কংগ্রেস(INC) সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর(Adhir Ranjan Chowdhury) নিজের জেলা। যে জেলায় কিছুদিন আগেই বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী। সেই জেলাতেই কিনা কংগ্রেসকে ব্রাত্য রেখে কোনও রকম জোটের পথে না হেঁটেই বামেরা জেলা পরিষদের জন্য নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিল। অথচ গত এক দেড় মাস ধরে শোনা যাচ্ছিল তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে নাকি সাগরদিঘী মডেলে জোট গড়ে সব বিরোধীরা ভোটে লড়াই করবে। বাস্তব চিত্র বলে দিচ্ছে সেই সাগরদিঘী মডেলকে ছুঁড়ে ফেলে দিল বামেরা।
আরও পড়ুন শুভেন্দু গড়ের বিজেপি নেতা চলে এলেন তৃণমূলে
অধীর চিরকালীন বাম মিত্র হিসাবেই সুপরিচিত এবং তিনি নিজেও এবারে যখন জোট বার্তা দিয়েছিলেন, সেই অধীর গড়েও বামেরা কেন জোট গড়ার পথে হাঁটা দিল না সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে গেল রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও প্রাথমিক অনুমান, বামেদের যে ভোট গিয়েছিল রামের ঝুলিতে তা আবারও ফিরতে শুরু করে দিয়েছে বামের ঝুলিতে। এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের বাম নেতারা। আর তাই তাঁরা এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে আঁকড়ে ধরেই রাজ্যের হারানো মাটি যতটা সম্ভব ফিরে পেতে চান। সেই কারণেই তাঁরা কোনও জোটে না গিয়ে নিজেরা নিজেদের পছন্দমতন আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তাতেই ধাক্কা খাচ্ছে সাগরদিঘী মডেল, ধাক্কা খাচ্ছেন অধীর নিজেও। এদিন বামেদের তরফে সাংবাদিওক বৈঠক করে জানানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ৭৮টি আসনেই প্রার্থী দেবে বামেরা। সেখানে ১টি আসনও ছাড়া হয়নি কংগ্রেসের জন্য। তবে সাংবাদিক বৈঠকে এটাও জানানো হয়েছে তৃণমূল বিরোধী সার্বিক জোট হবে জেলার পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে। যদিও এভাবে কোনও জোট হয় কিনা সেটাই এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন নয় কেন্দ্রীয় বাহিনী, আনা হবে ভিন রাজ্যের পুলিশ বাহিনী
তবে শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, জোট জট পাকিয়েছে আরও বেশ কিছু জেলায়। যেমন উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বামেরা জেলা পরিষদের ৬৬টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসনে তাঁদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে। বাকি থাকা আসনের মধ্যে কোনও আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়া হবে কিনা তার কোনও গ্যারেন্টি বাম নেতারা দেননি। তাঁরা শুধু জানিয়েছেন, বাম শরিকদলগুলির সঙ্গে আসন বন্টন সূত্র ঝুলে রয়েছে। সেই সমস্যা মিটে গেলেই বাকি আসনেও প্রার্থী দিয়ে দেওয়া হবে। তবে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জোটে যেতে পারে বামেরা। হুগলি জেলাতেও একই ছবি। সেখানেও জেলা পরিষদের ৫৩টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনের প্রার্থী তালিকা তাঁরা প্রকাশ করে দিয়েছে। বাকি ৫টি আসনের মধ্যেও কোনও আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়া হচ্ছে না। কার্যত সেখানেও পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জোটের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু জেলা পরিষদ স্তরে কোনও জোট গড়া হচ্ছে না। তবে বামেরা শুধু যে কংগ্রেসকেই জমি ছাড়ছে না তাই নয়, তাঁরা ISF-কেও কোনও আসন ছাড়ছে না জেলা পরিষদ স্তরে। আর বামেদের এই মনোভাব দেখে এখন কংগ্রেস ও ISF দুই দলেই আওয়াজ উঠেছে বামেরা যেমন জেলা পরিষদ স্তরে কাউকে আসন ছাড়ছে না তেমনি পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও বামেদের যেন কোনও আসন ছাড়া না হয়। সব মিলিয়ে বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল বিরোধী সার্বিক জোট বিশ বাঁও জলে তলিয়ে গেল ভোটের শুরুতেই।