নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাই আজ যে বিরোধী কাল সে পাশে এসে দাঁড়াতেই পারে। আসলে রাজনীতিতে সম্পর্ক ওঠানামা করে সময়ের চাহিদা মেনেই। সেই সময়ই বলে দিচ্ছে দিল্লিতে কেন্দ্রের সরকার থেকে নরেন্দ্র মোদির রাজত্বপাট ২০২৪-এ থাক বা যাক, যাই হোক না কেন, বাংলায় পদ্ম যাচ্ছে ক্রমশ শুকিয়ে। একুশের বিধানসভা ভোটের পরবর্তীকালে হয়ে যাওয়া সব ভোটেই দেখা যাচ্ছে বিজেপির পায়ের তলার থেকে মাটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে। গেরুয়া শক্তিকে পিছনে ফেলে আবারও বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে বামেরা। পদ্ম এখন ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির কর্মীরাও এখন নিত্যদিনই দলে দলে বিজেপি পদ্ম ত্যাগ করে হাতে জোড়াফুল তুলে নিচ্ছেন। ঠিক এই রকম অবস্থায় বুধবার কোচবিহারে রাজবংশী সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা জেলার বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে সম্ভাবনা। একমঞ্চে মমতা-নিশীথ। আর এই সম্ভাবনাই বঙ্গ রাজনীতিতে নিশীথকে ঘিরে জল্পনা ছড়িয়ে দিল নতুন করে।
রাজবংশীদের দুই গোষ্ঠীর অন্যতম মাথা অনন্ত মহারাজের এক অনুষ্ঠানের আগামিকাল যোগ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠান মূলত চিলা রায়ের জন্মদিবসের অনুষ্ঠান। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই মমতা-নিশীথ এক মঞ্চে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনায় রাজ্য রাজনীতিতে বেশ জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। জল্পনা নিশীথকে ঘিরেই। উনিশের লোকসভা ভোটের মুখেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন নিশীথ। তার জেরে পেয়ে যান ভোটে লড়াই করার টিকিটও। জিতেও যান তিনি মোদি হাওয়ায় ভর দিয়ে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও নিজের জেলায় বিজেপিকে বড় জয়ের মুখ দেখাতে পারলেও নিশীথ ধাক্কা খান তাঁর নিজের শহর দিনহাটায়। সেখানে মাত্র ৫৬ ভোটে জেতেন তিনি। তার জেরে সাংসদ পদ ধরে রেখে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফাও দেন তিনি। এরপর সময় যতই গড়িয়েছে ততই নিশীথের তৃণমূল যোগের সম্ভাবনা দ্রুত হারে ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নিশীথের তৃণমূল যাত্রা ঠেকাতেই মোদি-শাহ তাঁকে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে নিশীথের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব বাংলার বুকে বিজেপিকে কোনও অ্যাডভান্টেজ এনে দেয়নি। বরঞ্চ সময় যত গড়াচ্ছে ততই বিজেপি বাংলা জুড়ে জমি হারাচ্ছে। যে উত্তরবঙ্গ উনিশের ভোটে বিজেপিকে দুই হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিল সেই উত্তরবঙ্গে একুশের ভোটে অনেকটাই জমি ফেরত পেয়েছে তৃণমূল। মালদা ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় তৃণমূল সর্বকালীন সেরা ফল করেছে। দক্ষিণ দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতেও বিজেপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তবে দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ার তৃণমূলকে হতাশ করেছে। আসন খব কম এসেছে কোচবিহার থেকেও। কিন্তু সেই একুশের পরবর্তীকালের নির্বাচনে বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়া আর তৃণমূলের জয় বাংলার রাজনীতিতে অন্য সঙ্কেত এনে দিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কোচবিহার জেলা হোক কী উত্তরবঙ্গ বিজেপির কোনও অনুষ্ঠানেই দেখা মেলে না নিশীথের। আগামি ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পুরসভায় নির্বাচন। অথচ নিশীথকে সেভাবে বিজেপির হয়ে কোনও প্রচার করতেই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তাঁর নিজের শহর দিনহাটায় তৃণমূল ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে। তার জেরে বিজেপির মধ্যেই এখন অভিযোগ উঠেছে নিশীথই তাঁর তৃণমূলে ফেরার পথ প্রশস্ত করতে তৃণমূলকে জমি ছেড়ে দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটেই আগামীকাল মমতা-নিশীথ একম্নচে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে যার দিকে নজর রাখছে বাংলার রাজনৈতিক মহলও।
অনন্ত মহারাজ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের অনুষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে যেমন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তেমনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখানে রাজনীতি খোঁজা ভুল। দুইজনে একসময়ে নাও আসতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে এলে দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যেই আসবেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এলে হয় তার আগে আসবেন বা পরে আসবেন। ঘটনা হচ্ছে অনন্ত মহারাজ যাই ব্যাখা দিন না কেন, আগামিকাল তাঁর অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে মমতা-নিশীথকে এক মঞ্চে দেখা যায় কিনা তা দেখার জন্যই গোটা বাংলা তাকিয়ে থাকবে। যদি সেটা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপিকে বড় ধাক্কা দিয়ে দেবে। কেননা নিশীথ নিজে রাজবংশী সম্প্রদায়ের। আবার উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা কেন্দ্র ও ৮টি লোকসভা কেন্দ্রের ৩০ শতাংশ ভোটারই রাজবংশী সম্প্রদায়ের। স্বাভাবিক ভাবেই নিশীথ আগামিদিনে তৃণমূলে যোগ দিলে রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কের বেশিরভাগ অংশটাই ফের তৃণমুলের ঝুলিতেই ফিরবে। লাভ হবে তৃণমূলের ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে।