নিজস্ব প্রতিনিধি: জগদীপ ধনখড়ের সময়ে শুরু হওয়া বিবাদের জল গড়িয়ে চলেছে সি ভি আনন্দ বোসের সময়েও। বিবাদ অব্যাহত রয়েছে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে। তার মধ্যেই শিক্ষক দিবসের দিনেই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে সরব হতে বাধ্য হলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর সেই সূত্রেই একাধিক বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) এদিন কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে(C V Anand Bose)। সেই সঙ্গে এটাও শুনিয়ে দিয়েছেন, ‘দরকার হলে আমি রাজভবনের সামনে ধর্না দেব।’ রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কিন্তু সংবিধান তাঁকে রাজ্য প্রশাসনের প্রধান করে দেয়নি। তাঁর হাতে নির্দিষ্ট করেই কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জগদীপ ধনখড় ও সি ভি আনন্দ বোস উভয়েই দেখা যাচ্ছে তাঁদের রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি রাখতে ও খুশি করতে যাবতীয় নিয়ম-নীতি লঙ্ঘণ করে যা খুশি করে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সেই সবের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘আমরা বিল পাঠাচ্ছি উনি ফেরত পাঠাচ্ছেন না। সংবিধান(Constitution) অনুসারে এটা উনি করতে পারেন না। আর্থিক বিল ছাড়া আর কিছু রাজ্যপাল ফেরত পাঠাতে পারেন না। সব বিল(Bill) আটকে রাখছে। আমরা বার বার পাঠিয়ে রেখেছি। বাধ্য হলে আমরা আইনের পথেও যাব, আশা করি আইন সুবিচার দেবে। জোর করে আমাদের আটকানো যাবে না। বাংলাকে নিয়ে অকারণ খেলা চলবে না। বিধানসভা(Assembly) পর্যন্ত রাজ্যপাল ডাকতে দেন না। ওনার মনে রাখা দরকার রাজভবনের টাকাও আমার রাজ্যের মানুষ দেয়। এই যে মাঝেমধ্যে কেরল থেকে অতিথি এনে রাজভবনে চা খাওয়ান, সেই টাকাও আমরা দিই। রাজভবনের যাঁরা কর্মী, তাঁদের বেতন রাজ্য সরকারই দেয়। রোজ নাচাগানা হচ্ছে। কখনও কখনও বাইরে থেকে লোকজন ডেকে এনে, হয়ত অন্য রাজ্যের কোনও প্রাক্তন ডিজিকে ডেকে এনে অনুষ্ঠান হচ্ছে। যা ইচ্ছে করছে, অকাজের কাজ বেশি হচ্ছে। সব বন্ধ হয়ে যাবে।’
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে বসে আছেন একজন মাননীয় রাজ্যপাল। তিনি বলছেন, আমি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় দেখব। আমি বলেছি আইন মেনে চলুন। আমার আপত্তি নেই। ওনার বাড়িতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোন নম্বর লাগানো আছে। আমি অনেকবার বলেছি এটা করবেন না। টাকা দেব আমরা, পলিসি করব আমরা, আর আপনি খবরদারি করবেন। কখনও আপনার শুনেছেন, মধ্যরাতে ১৬ জনকে টপকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বদলে গেছে। হঠাৎ শুনলাম কেরলের এক আইপিএসকে ভিসি করে দিয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবীন্দ্রভারতীর ভিসি পদে নিয়ে আসা হয়েছে প্রাক্তন বিচারপতিকে। তাঁকে আমি চিনি। উনি আমার সঙ্গে পড়াশুনা করেছেন। আমি তাঁর বিরুদ্ধে বলছি না। কিন্তু তিনি তো কখনও শিক্ষকতা করেননি, তিনি আইনের কাজ করেছেন। তিনি চাইলে আইনের কাজে যেতে পারতেন। তার মানে কি? সিস্টেম ভেঙে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে। যদি রাজ্যপাল মনে করেন, তিনি সব করবেন, তাহলে নির্বাচিত সরকারের কোনও দরকার নেই। কিন্তু আমিও বলে রাখছি, দরকার হলে আমি রাজভবনের সামনে ধর্না দেব। দেখব কটা বিল উনি আটকে রাখেন।’