নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার সর্ববৃহৎ কয়লাখনি। দেশেরও সর্ববৃহৎ কয়লা খনি। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়ালখনি। হ্যাঁ বীরভূম(Birbhum) জেলার দেউচা পাঁচামি(Deucha Pnachami) কয়লা খনির কথাই বলছি। সেখানে এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের খননের কাজ শুরু করার নির্দেশ জারি করে দিল রাজ্যের ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার(Mamata Banerjee)। ইতিমধ্যেই বীরভূম জেলা প্রশাসনের কাছে সেই নির্দেশিকা চলে এসেছে। সেখানেই বলা হয়েছে, দেউচা পাঁচামির ৪ বর্গকিমি এলাকাজুড়ে যেখানে জনবসতি নেই, সেখানে ওপরের স্তরের ব্যাসল্ট তুলে ফেলার কাজ যেন শুরু করা হয়। কেননা এই ব্যাসল্ট বা পাথরের স্তর না তুলে ফেললে কয়লার কাছে পৌঁছানো যাবে না। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু না হলে এই প্রকল্প(Coal Mines Project) তৈরিতে জমি দেওয়া প্রত্যেক জমিদাতাদের দ্রুত চাকরির ব্যবস্থাও করা যাবে না। ইতিমধ্যেই জমিদাতারা সেখানে চাকরির দাবি তুলে ধর্না শুরু করেছেন। কবে প্রত্যেকের চাকরি হবে, সেদিকে তাকিয়ে এলাকার জমিদাতারাও।
নবান্ন থেকে বীরভূম জেলা প্রশাসনের কাছে যে নির্দেশিকা এসেছে তাতে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকার মধ্যে জনবসতি নেই এরকম জায়গা চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে। তারপরেই প্রায় ৪ বর্গকিমি জায়গাজুড়ে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করতে হবে। এরপর গর্ত করে সেখান থেকে ওপরের ব্যাসল্ট পাথর তুলতে হবে। সেই পাথর কী করা হবে, তা নিয়েও পরিকল্পনা করছে রাজ্য প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই পাথর বিকল্প কাজে লাগানোর জন্য কোনও কোম্পানিকে বরাত দেওয়া হতে পারে। তবে ব্যাসল্ট তুলতে গিয়ে যে সমস্ত মাটি, কাদা, রাবিশ, ধুলো উঠে আসবে সেগুলি কোন অংশে জমা করে রাখা হবে, তা নির্দিষ্ট করতেও জেলা প্রশাসনকে জমি দেখতে বলা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর মহকুমার মহম্মদবাজারের(Muhammad Bazaar) কেন্দ্রপাহাড়ীতে দেউচা পাঁচামি প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হতে চলেছে।
প্রথম পর্যায়ের খননে মাটি খুঁড়ে কয়লার স্তরের অবস্থান জানার কাজ চলে। এরপর বাকি প্রকল্প এলাকাতেও একইভাবে বোরিং করে বিপুল কয়লা ভাণ্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে রাজ্য সরকার। কার্যত ১ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হওয়ায় প্রকল্প নিয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট হচ্ছে। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরুর নির্দেশ আসার পর পরই প্রশাসনিক তৎপরতা আরও বেড়েছে। ফলে পুজোর আগেই দেউচা-পাঁচামি প্রকল্প একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যা বাংলার অর্থনীতিকে একটি নতুন পথে পরিচালিত করবে। তবে, প্রকল্প গতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি বিষয়ও উঠে আসছে।
ইতিমধ্যেই চাকরি না পাওয়ায় জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বেশ কয়েকজন জমিদাতা। তাঁরা অভিযোগ তুলছেন, জমি দিলেও তাঁদের এখনও চাকরি মেলেনি। এর আগে অনেক জমিদাতাদের চাকরি হয়ে গিয়েছে। Group-D ও পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবল পদে তাঁরা কর্মরত রয়েছেন। তাই দ্রুত যাতে সকলের চাকরি ব্যবস্থা করা যায়, সেই দাবিতে জমিদাতারা সরব হচ্ছেন। জমিহারা বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য কোথায় বাড়ি তৈরি করার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। কলোনি বানানোর জন্য জায়গা চিহ্নিত করার কাজও হয়ে গিয়েছে। ফলে বোরিং প্রক্রিয়া শেষের পর কয়লা প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজেও জোরকদমে হাত লাগাতে চলেছে বীরভূম জেলা প্রশাসন।