নিজস্ব প্রতিনিধি: একদিকে ছবিটা খুবই গর্বের ও সাফল্যের। অন্যদিকে অবশ্যই উদ্বেগের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) চালু করা স্বাস্থ্যসাথী(Swasthya Sathi) প্রকল্প এবং সব সরকারি হাসপাতালে Free Medicine ও Free Treatment’র দৌলতে রাজ্যবাসী রীতিমত উপকৃত। সেই পরিষেবা বিশ্বজুড়ে বন্দিতও হচ্ছে। মমতার দেখানো পথ অনুকরণ, অনুসরণ করছে এদেশেরই অনেক রাজ্য। এটা যদি সাফল্যের ও গর্বের ছবি হয় তাহলে উদ্বেগের ছবি বাংলার সরকারি হাসপাতালে ক্রমশই বেড়েছে চলে বিদেশী নাগরিকদের চিকিৎসার ঘটনা যা সরকারি কোষগারের ওপরেও চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতির চাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও বাংলার সরকারি হাসপাতালে বিদেশী নাগরিকদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন Guideline আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বছরেই তা সামনে আনা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাংলার পাশেই রয়েছে ৩টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। নেপাল, ভূটান ও বাংলাদেশ। এই ৩ দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই ৩ দেশের নাগরিকেরাই ভারতের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সেই সূত্রেই ৩ দেশের নাগরিকদেরই Medical Visa, Tourism Visa, Education Visa, Business Visa দিতে বিন্দুমাত্র পিছুপা হয় না ভারত সরকার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এই সব ভিসার হাত ধরে এদেশে পা রাখা বিদেশী নাগরিকদের একটা বড় অংশই বাংলার নানা সরকারি জেলা হাসপাতাল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন। বাংলার বাসিন্দাদের মতোই তাঁরা সেখানে স্বাস্থ্যসাথী ও Free Medicine তথা Free Treatment’র সুবিধা পাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশিদের মধ্যে এই প্রবণতা বহুল হারে দেখা যাচ্ছে। নিত্যদিন শ’য়ে শ’য়ে বাংলাদেশি রোগী হাজির হচ্ছেন কলকাতায় এবং জেলাগুলির বড় সরকারি হাসপাতালে। রীতিমতো বাংলাদেশের ঠিকানা দিয়েই তাঁরা ভর্তি হচ্ছেন। কানের পর্দার অপারেশন, স্টেন্ট ও পেসমেকার বসানো, হাঁটু-কোমর প্রতিস্থাপন প্রভৃতি হচ্ছে নিখরচায়। হাইপ্রোফাইল পেয়িং ওয়ার্ড উডবার্নেও তাঁরা ভর্তি হচ্ছেন ভারতীয়দের সমান ফি দিয়ে।
ঘটনা হচ্ছে এই ছবিটা একদিকে যেমন বলে দিচ্ছে মমতার চিকিৎসা পরিষেবার ওপর বাংলার বাইরের মানুষেরাও এখন অন্ধভাবে আস্থা রাখছেন, ভরসা রাখছেন, বিশ্বাস রাখছেন, ঠিক তেমনি এর জন্য বাংলার সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা বেড়িয়েও যাচ্ছে, যা রাজ্যের কোষগারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। কার্যত কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। লোকসান কোথায়? বাংলাদেশ হোক কী নেপাল কী ভূটান! বাংলা তথা ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর এরা দীর্ঘদিন ধরেই নির্ভরশীল। সেই সুবাদে দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারত এবং বাংলার বেসরকারি হাসপাতালগুলি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করছে যা করতে পারছে না বাংলার সরকারি হাসপাতালগুলি। বরঞ্চ সেখানে সরকারি অনুদান দিতে হচ্ছে বিদেশী নাগরিকদের চিকিৎসা প্রদান করার জন্য। আর তাই রাজ্যের সরকারি কোষাগারে যখন ভাঁড়ে মা ভবানী দশা তখন আর নিখরচায় বিদেশী নাগরিকদের চিকিৎসা দেওয়ার রাস্তা কিছুটা হলেও বন্ধের পথে হাঁটতে চাইছে মমতার সরকার। আর সেই কারণেই আসছে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে বিদেশী নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য একটি নয়া Guideline। ভিনদেশী রোগীরা কীভাবে ভর্তি হবেন, কী কী কাগজপত্র লাগবে, কত টাকা খরচ পড়বে, চিকিৎসা পেয়িং হবে না ফ্রি, সবটাই তাতে থাকবে।