নিজস্ব প্রতিনিধি: গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্যের নানান মহলে উদ্বেগ কিছু কম নেই। অনেকেই মনে করছেন এই মেলা কার্যত রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ‘সুপারস্প্রেডার’ হয়ে উঠতে চলেছে। এই অবস্থায় বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই সব মামলার মূল আর্জিই ছিল কোভিড আবহে এবারের মতো স্থগিত করা হোক গঙ্গাসাগর মেলা। যদিও রাজ্য সরকার তাই চায়নি। মূলত রাজ্যের প্রবল ইচ্ছার জন্যই কলকাতা হাইকোর্ট ও মেলার আয়োজনের ওপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি। বরঞ্চ দুই সদস্যের এক নজরদারী কমিটি গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু কড়া শর্ত আরোপ করে মেলা আয়োজনের ছাড়পত্র দিয়েছে হাইকোর্ট। এরপরেই মেলার আয়োজন সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্যের চার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে মাঠে নামিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরা হলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শশী পাঁজা ও পুলক রায়।
গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে গতকালই চলে গিয়েছে মন্ত্রী শশী পাঁজা। এদিন সেখানে যাচ্ছেন মন্ত্রী পুলক রায়ও। মেলার তত্ত্বাবধানে আগে থেকেই সেখানে রয়েছেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। ফিরহাদ হাকিম থাকবেন ৮ নম্বর লটে। অরূপ বিশ্বাস থাকবেন হারউড পয়েন্টে। পরে তিনি মেলা প্রাঙণেও পা রাখবেন। মূলত গঙ্গাসাগর মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য মন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকাল থেকেই কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্টে থিকথিকে ভিড় চোখে পড়ছে। বাস থেকে নেমে হাজার হাজার যাত্রী উঠছেন ভেসেলে। সেই ভিড়ের আবার একটা বড় অংশই বিনা মাস্কে। এদেরকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি হাতে মাস্ক ধরিয়ে তা পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মেলায় পা রাখতে চলা পূণ্যার্থীদের ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে ভিড়ের কারণে উধাও শারীরিক দূরত্ব বিধি।
গঙ্গাসাগরমুখী পুণ্যার্থীদের ভিড় এদিন সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করে কাকদ্বীপের ৮ নম্বর লটে। তার জেরে এদিন সকাল ৮টা থেকেই সেখান থেকে কচুবেড়িয়াগামী ভেসেল পরিষেবা চালু করে দেওয়া হয়। ভিড় চোখে পড়ছে কলকাতার বাবুঘাটেও। কেননা এখান থেকেই ছাড়ছে গঙ্গাসাগর যাওয়ার বাস। টিকিট কাউন্টারে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট দেখালে তবেই মিলছে বাসের টিকিট। সেই সঙ্গে চলছে পূণ্যার্থীদের কোভিড টেস্টও। বাবুঘাটের পাশাপাশি গঙ্গাসাগর মেলা চত্বরে প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার চালান হচ্ছে ই-স্নানের জন্য। যদিও তা কতজন মানবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কপিল মুনির আশ্রম, মেলা চত্বর মাঝে মধ্যেই স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। লকগেট তৈরি করে মন্দির চত্বরে প্রতিবারে ৫০ জন করে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। তবে মন্দিরের ভিতরে সাধু-সন্ন্যাসীদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। ঘটনাচক্রে এদিন সন্ধ্যাতেই মেলা প্রাঙ্গণে গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হয়েছে। সেই সময়েই বোঝা যাবে মেলায় এবার আগত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ঠিক কত।
মেলা প্রাঙ্গণে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তাঁরা মূলত নজরদারি করছেন মেলায় আসা মানুষ মুখে মাস্ক ঠিকমতন পরে থাকছেন কিনা। এর পাশাপাশি গতকালই মেলায় পৌঁছেছেন কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত নজরদারি কমিটির দুই সদস্য প্রাক্তন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য লিগ্যাল এইডের সদস্য সচিব রাজু মুখোপাধ্যায়। গতকাল রাতেই তাঁরা মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন করার কথা জানান প্রশাসনকে। রাতেই এই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী বঙ্গিমচন্দ হাজরা, জেলাশাসক পি উলগানাথন সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। এদিনও নজরদারি কমিটি মেলাচত্বর পরিদর্শন করে হাইকোর্টকে রিপোর্ট জমা দেবেন।