এই মুহূর্তে

গণবিবাহ আদতে প্রি ম্যারেজ সেক্স, মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান ঘিরে দাবি বিকাশ পরিষদের

নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar) জেলার সুভাষিণী চা বাগানে জেলা পুলিশের উদ্যোগে বুধবার একটি গণবিবাহ(Mass Marriage) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই অনুষ্ঠান ঘিরেই কার্যত তালিবানি কায়দায় আজব দাবি করে বসল অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ(AVABP)। তাঁরা জেলা পুলিশের এই অনুষ্ঠান বয়কট বা বাতিল করার দাবি না তুললেও সেই অনুষ্ঠানে যারা বিয়ে করবেন তাঁদের বিয়েকে সামাজিক স্বীকৃতি না দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি আগামী দিনে যাতে এই ধরনের অনুষ্ঠানের কোনও আয়োজন যাতে না করা হয় তার জন্য আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের সব থেকে বড় দাবি, গণবিবাহ আদতে প্রি ম্যারেজ সেক্স। আর এই দাবি ঘিরেই এখন তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে নানান মহলে।

আদিবাসী সমাজে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে সমাজের মোড়ল তথা মাতব্বরদের ভেট দিয়ে খুশি করে বিয়ের অনুমতি নিতে হয় বলে দাবি আদিবাসী সমাজের যুবক-যুবতীদের। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে গোটা গ্রামকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে হয়। গরিব আদিবাসী পরিবারের পক্ষে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য সেই খরচ বহণ করার মতো সামর্থ্য থাকে না সিংহভাগ ক্ষেত্রে। তাই আদিবাসী সমাজে বিয়ের ঘটনা ক্রমশ কমছে বলেও দাবি করেছে বেশ কিছু সমীক্ষাকারী সংগঠন। শুধু যে আদিবাসীদের মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে তাই নয়, আর্থিক কারণে রাজ্যজুড়েই এই সমস্যা রয়েছে নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে। তাঁদের হয়তো বিয়ের জন্য কারও কাছ থেকে কোনও অনুমতি নিতে হয় না, কিন্তু আর্থিক কারণে অনেক বাড়ির লোকেরাই তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে পারেন না। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় প্রতিটি জেলা পুলিশকে অনুরোধ করেন বছরে একটি করে হলেও গণবিবাহের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। সেখানে আদিবাসীদের পাশাপাশি তপশিলী ও সাধারন দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে। এই ধরনের অনুষ্ঠান কার্যত রাজ্য জুড়েই হয় সারা বছর ধরে।

কিন্তু সুভাষিণী চা বাগানের গণবিবাহ অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আপত্তি তুলেছেন, অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মাথারা। সংগঠনের জেলা সভাপতি বাবলু লাকরার(Bablu Lakra) দাবি, ‘গণবিবাহটা আসলে কী জিনিস? গণবিবাহটা কাদের জন্য? আমাদের বক্তব্য, এই গণবিবাহ যদি গরিব আদিবাসীদের জন্য হয়, তাহলে আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছে এতে৷ এই বিষয়ে আমরা এখনও অন্ধকারে আছি৷ যারা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তারা কীভাবে এই বিবাহ করছেন? কার নির্দেশে বা অনুমতি নিয়ে এটা করছেন? কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে এসে, যাঁদের হয়তো আর্থিক সামর্থ নেই বলে বিয়ে হয়নি, তাঁদের এনে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এটা একটা প্রি ম্যারেজ সেক্স৷ আমরা সমাজে কী বার্তা দিচ্ছি? এটা তো সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া প্রি ম্যারেজ সেক্সের৷ আমাদের সমাজের প্রি ম্যারেজ সেক্স নেই৷ আমরা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রি ম্যারেজ সেক্সকে বন্ধ করতে চাইছি৷ আমরা মানুষকে বোঝাতে চাইছি৷ এক পক্ষ এটাকে সমর্থন করছে৷ আর এক পক্ষ বিভ্রান্ত হচ্ছে৷ আমরা বলতে চাইছি যা হচ্ছে সেটা আগামী দিনের জন্য এবং প্রজন্মের জন্য ভালো হচ্ছে না৷ আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্যও ভালো হচ্ছে না৷ আমরাও দিদির সমর্থক৷ তবে কিছু কিছু বিষয় যেগুলো আমাদের সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক, সে ব্যাপারে আমরা দিদিকে জানাতে চাই৷ বিজেপি ও আরএসএস এটা করত আগেও৷ আমরা তখন থেকেই বিরোধিতা করে আসছি৷’

লাকরার এই বক্তব্য ঘিরেই এখন তীব্র আপত্তি উঠেছে নানান মহলে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বিয়ের জন্য দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা মহিলা কেন এই ধরনের স্বঘোষিত মোড়লদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে যাবেন? পরিবাররাই বা কেন অনুমতি নিতে যাবে? আর গণবিবাহের অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই বাংলার বুকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেখানে রীতিমত ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়ম মেনেই বিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি বিয়ে সরকারি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্টার্ডও করা হয়। সেই বিয়ে যদি অবৈধ না হয় তাহলে সুভাষিণী চা বাগানে গণবিবাহের অনুষ্ঠান কেন অবৈধ হবে আর তা কেন প্রি ম্যারেজ সেক্স বলে চিহ্নিত হবে? তাহলে কী অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মাথারা এটাই প্রমাণ করতে চাইছেন যে আধিবাসী সমাজ আর তাঁদের হাতের মুঠোয় নেই। তাঁরাও শিক্ষিত হয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে চাইছেন আর মধ্যযুগীয় কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছেন। আর তাতেই প্রমাদ গুণছেন লাকরার মতো আদিবাসী নেতারা। নাকি নিজেকে তৃণমূল সমর্থক হিসাবে দাবি করেও আদতে বিজেপির হাতে তামাক খাচ্ছেন লাকরা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন বিজেপির নির্দেশেই এই গণবিবাহ বন্ধ করতে পিছন থেকে কলাকাঠি নাড়া শুরু করে দিয়েছেন এই আদিবাসী নেতা।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

শেখ শাহজাহানের জামিনের আবেদন খারিজ

রাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে অলোক সিনহা

চাই পুরসভা, চাই পূর্ণাঙ্গ থানা, গলা তুলছে আমোদপুর

নির্বাচন কমিশনকে ‘মেসো’ বলে কটাক্ষ দিলীপের

দইয়ের পর এবার হুগলীর ঘুগনিতে মুগ্ধ রচনা, খেলেন আবার খাওয়ালেনও

‘ভগবানের’ প্রার্থীপদ খারিজের দাবি তৃণমূলের, নেপথ্যে মৃত্যু কামনা

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর