নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা আস্ত গ্রাম পর্তুগিজদের। সকলেই খ্রিস্টান। সকলের নেশা ফুটবল। পর্তুগাল দল মানেই তাঁদের আবেগ উন্মাদনা। অবশ্য ভারত কখনও বিশ্বকাপ খেললে তাদের সমর্থন থাকবে ভারতের প্রতিই। গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান সমর্থক। গ্রামের যুবক-যুবতীরা বাইচুং বলতে অজ্ঞান। তারা আবার গায়, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’। এরাই যেন সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বে চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, সম্প্রীতির কথা। সব ঘেঁটে যাচ্ছে তো?
এই পর্তুগিজদের গ্রাম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের মীরপুরে। গেঁওখালি থেকে সামান্য দূরেই এই গ্রাম। প্রসঙ্গত, ১৮৮৮ সালে খ্রিস্টান মিশনারি যাজক উইলিয়াম কেরি গেঁওখালি গ্রামে এসেছিলেন ধর্মপ্রচার করতে। পর্তুগিজ হলে কী হবে, সকলেই ভারতীয়। মানে, পর্তুগিজদের উত্তরসূরীরা বংশপরম্পরায় এখানে থাকতে থাকতে হয়ে উঠেছে ভারতীয়। সবার মাতৃভাষা বাংলা। সকলেই খ্রিস্টান। কেউ ক্যাথলিক। আবার কেউ প্রোটেস্ট্যান্ট। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে দু’টি গির্জা। বসবাস প্রায় ১৫০ খ্রিস্টান পরিবারের।
কারও পদবী টমাস, কারও ডিক্রুজ, আবার কারও বা রথা। সব মিলিয়ে মোট ১২ টি পদবী’র উপজাতি পরিবার বাস করে এই গ্রামে। পর্তুগিজদের গ্রাম কী করে? শোনা যায়, আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্গি হানায় অতিষ্ঠ মহিষাদল। তখন মহিষাদলের রাজা আনন্দলাল খান বা তাঁর স্ত্রী রানি জানকী গোয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়ে এসেছিলেন ১২টি উপজাতির পর্তুগিজ বন্দি (গোলন্দাজ)দের। আর থাকার জন্য নিষ্কর জমি’র স্বত্ত্ব দিয়েছিলেন মীরপুরে। এই ১২ পর্তুগিজ প্রতিহত করতেন বর্গিদের। তারপর তাঁরা বংশপরম্পরায় থাকতে থাকতেই গড়ে উঠেছে আস্ত পর্তুগিজ গ্রাম।
বড়দিনের রাতে এখানের চার্চে হয় প্রভু যীশু’র (JESUS) কাছে প্রার্থনা। সেই ক্যারল যেন কীর্তন। কী নেই? খোল-করতাল এমনকি বাংলা গান! ২৫ ডিসেম্বর সেই খোল করতাল নিয়ে চলে পাড়া প্রদক্ষিণ। এ যেন হরির সাধনা। অবশ্য অ্যান্টনি ফিরঙ্গি তো বহু আগেই গেয়েছিলেন, ‘খ্রিস্টে আর কৃষ্টে কোনও তফাৎ নাইরে ভাই’।
মীরপুর গ্রামে এভাবেই হয়েছে দু’ই সংস্কৃতির আত্তীকরণ। আর চার্চে শুধু খ্রিস্টান নয়, ভিড় জমান হিন্দু-মুসলিম সকলেই। বড়দিনের এই সময়ে গ্রামে ভিড় জমান অনেকেই। তাই গ্রামবাসীর অস্থায়ী ব্যবসা হয়ে উঠেছে বড়দিনের কেক।