নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মানুষ কোনও নির্বাচনেই জয়ের মুখ দেখাচ্ছে না পদ্মশিবিরকে। সেই একুশের ভোট থেকে শুরু হয়েছে তাঁদের হারের পালা। যত দিন যাচ্ছে ততই সেই হারের ছবি ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলার(Bengal) মানুষের পেটে লাথি মেরে তাঁদের শায়েস্তা করার পথ নিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। আর তাই বন্ধ হয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা। বন্ধ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার টাকা। এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে(Anganwadi Centre) শিশু এবং মহিলাদের জন্য বরাদ্দ খাবার রান্নার টাকাও। বীরভূম জেলায় এই কারণেই এবার প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে ৫ হাজারেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কেননা সেখানকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বিগত ৩ মাস ধরে কেন্দ্রের কাছ থেকে ১টাকাও পায়নি।
জানা গিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol) থুড়ি কেষ্ট’র জেলা বীরভূমে(Birbhum) রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ওই সব কেন্দ্র থেকে অন্তঃসত্ত্বা কিংবা সদ্য মা হয়েছেন, এমন মহিলা এবং শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়ে থাকে। ওই সব কেন্দ্রের ওপর সেই সূত্রে নির্ভরশীল জেলার সাড়ে ৫ লক্ষ উপভোক্তা। ওই সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবার শিশু ও মহিলাদের দেওয়া হয় ভাত ও ডিম-আলুর ঝোল। মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শনিবার দেওয়া হয় ডিম সেদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিনের তরকারি এবং আনাজ। এর জন্য চাল, ডাল তেল ও নুন ছাড়া বাকি মশলাপাতি, ডিম, সয়াবিন এবং আনাজ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বাজার থেকেই কিনতে হয়। নিয়ম হল, এই কেনাকাটা বাবদ মাসে যত খরচ হয়েছে, তার হিসাব সহ বিল দিলে পরের মাসে সেই বিলের টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু এখন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, জুন, জুলাই ও অগস্ট— এই ৩ মাসে আগের তিন মাসের বিল বাবদ কোনও টাকা তাঁরা পাননি। ফলে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের দাবি, এমনিতেই জ্বালানি বাবদ যে খরচ আসে, সেটা দিয়ে রান্না হয় না। স্বল্প মাইনের টাকা থেকে তাঁরাই মুদিখানা ও আনাজ বাজার করছেন। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে ৩ মাস টাকা না-আসায় মুদির দোকানে বড় অঙ্কের ধার হয়ে গিয়েছে। দোকানদারেরা জিনিসপত্র ধারে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। কর্মীদের কথায়, ‘মুদির দোকান থেকে শুরু করে বাজারে ২০-৩০ হাজার বা তারও বেশি টাকা পর্যন্ত ধার হয়ে গিয়েছে। যে-সব কেন্দ্রে উপভোক্তার সংখ্যা ১০০ বা তার বেশি, সেই সব কেন্দ্রের অবস্থা আরও করুণ। গোটা জেলায় এক ছবি। এ ভাবে কী করে আমরা কেন্দ্র চালাব?’ বকেয়া টাকা মিলবে, দফতর থেকে সদুত্তর মেলেনি। এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও তাঁরা দাবি করেছেন।
আর এই টাকা না আসার পিছনে এখন রাজনীতির গপ্পো শোনা যাচ্ছে। বীরভূমের দিকে পাখির চোখ রয়েছে পদ্মশিবিরের। কেননা সেখানকার মাটিতেই ঢেউচা-পাঁচামিতে বিশাল বড় কয়লাখনির কাজ শুরু হয়েছে যা অচিরেই জেলা তথা রাজ্যের আর্থসামাজিক অবস্থান বদলে দিতে চলেছে আগামী দিনে। কিন্তু সেই বীরভূমের মাটিতে কেষ্ট’র উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে বিন্দুমাত্র দাগ কাটতে পারেনি বিজেপি(BJP)। অগ্যতা জেলার জনতার পেটে লাঠি মেরে তাঁদের শায়েস্তা করার পথ নিয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। আর সেই কারণেই বেছে বেছে বীরভূমের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে।