নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা(Higher Secondary Exam 2024)। এদিকে উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি(Sandeshkhali) উত্তপ্ত হওয়ার অবস্থা থেকে কিছুতেই পিছু হঠছে না। নেপথ্যে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এমনকি সন্দেশখালিতে জারি আছে ১৪৪ ধারাও(Section 144)। এই অবস্থায় সন্দেশখালির রাধারানী হাইস্কুলে(Radharani High School) ১৬ তারিখ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে আসবেন ৭০০ পরীক্ষার্থী। তার জেরে পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন ও উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা দিতে যাবেন পরীক্ষার্থীরা! সেই উদ্বেগের কিছুটা অবসান ঘটেছে এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার। কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court) নির্দেশ দিয়েছে, গোটা সন্দেশখালি ব্লক জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা যাবে না। শুধুমাত্র উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে রাজ্য সরকার ১৪৪ ধারা জারী করতে পারে। সেই নির্দেশের পরে পরেই রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ(WBCHSE) বসিরহাট পুলিশ জেলাকে(Basirhat Police District) অনুরোধ জানালো সন্দেশখালি রাধারানী হাইস্কুল থেকে তাঁদের ক্যাম্প সরিয়ে নিতে।
সন্দেশখালিতে যেতে গিয়ে সোমবার প্রশাসনিক বাধার মুখে পড়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে ঢুকতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি। সেই মামলার আবেদনে তিনি জানিয়েছিলেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সন্দেশখালি যেতে পারেননি তিনি। আবার বামেদের তরফেও এই একই বিষয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। এদিন একযোগে দুটি মামলাই শুনানির জন্য ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চে। সেই মামলার শুনানির পরেই আদালত জানায়, সন্দেশখালি ব্লকজুড়ে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ খারিজ করা হচ্ছে। তবে রাজ্য সরকার প্রয়োজন পড়লে উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে নতুন করে ১৪৪ ধারা লাগু করতে পারে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো ব্লক এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই ১৪৪ ধারা খারিজ করা হল। আদালতের নির্দেশ, ওই এলাকায় আরও সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। একই সঙ্গে বিচারপতি দুটি মামলাই খারিজ করে দেন। সঙ্গে জানিয়ে দেন, বিরোধীরা সেখানে যেতে পারেন।
মামলার শুনানিকালে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত প্রশ্ন করেন যে, ‘গোটা সন্দেশখালি জুড়ে উত্তেজনা? কেন গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি? এর পর তো বলবেন গোটা কলকাতা জুড়েই ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে। মামলায় গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। হালকা ভাবে নেবেন না। গত তিন বছর ধরে পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি। এলাকার মহিলারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এত কিছু অভিযোগের পরে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’ এরপরেই সন্দেশখালির ব্লক জুড়ে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয় আদালত। আর সেই নির্দেশের পরে পরেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে থেকে বসিরহাট পুলিশ জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয় রাধারানী হাইস্কুল থেকে তাঁদের পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে নিতে। সংসদের দাবি, অশান্তির বাতাবরণে স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প থাকলে পরীক্ষার্থীরা মন দিয়ে তো পরীক্ষাই দিতে পারবে না। সারাক্ষণ ভয় আর চাপা টেনশান থাকবে। তাতে পরীক্ষা কোনওভাবেই ভাল হবে না। সেই কারণেই মঙ্গলবার সন্ধ্যের মধ্যেই স্কুল থেকে পুলিশকে সরানোর অনুরোধ করা হয়েছে সংসদের তরফে। একই সঙ্গে সংসদের তরফে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে যে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারে তার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।