নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিডের তৃতীয় ঢেউ কাঁপাতে শুরু করেছে বিশ্বকে। বাদ নেই ভারতও। খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলাও। ইতিমধ্যেই বাংলায় ১১জন ওমিক্রন আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫জনের আবার বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। আর এই জায়গাতে দাঁড়িয়েই বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কড়া সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলায় আছড়ে পড়তে চলেছে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। তার থেকেও বড় কথা, কলকাতায় সম্ভবত ওমিক্রনের গোষ্ঠীসংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সংক্রমণের ঢেউ বাংলায় আছড়ে পড়লে দৈনিক সংক্রমণ ৩৫ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই প্রেক্ষাপটেই আগামী ২২ জানুয়ারি রাজ্যের চার পুরনিগম ও ২৭ ফেব্রুয়ারি আরও শতাধিক পুরসভার নির্বাচন চূড়ান্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি।
চলতি বছরের মে মার্চ-এপ্রিল মাসে রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন হয়েছিল ৮ দফায়। যা নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের পাশাপাশি বাম-কংগ্রেসের তরফেও ক্ষোভ জানানো হয়েছিল। কেননা সকলেরই আশঙ্কা ছিল, বেশি দফায় ভোট হলে জমায়েতও বেশি হবে যা কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউকে তরান্বিত করবে। যদিও সেই আশংকাবার্তায় কর্ণপাত করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তাঁরা কোভিডের মধ্যেই ৮ দফায় ভোট করায় বাংলায়। আর সেই ভোট মিটতেই মে মাসে দেখা যায় কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বাংলায়। তার জেরে নেমে আসে লকডাউনের মতন পরিস্থিতি। সেই ঘটনায় মাদ্রাজ হাইকোর্ট কমিশনের ওপর রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছিল, কমিশনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, কলকাতায় ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়ে গিয়েছে তখনই আয়োজন চলছে পুরভোটের। আগামী ২২ জানুয়ারি ভোট রয়েছে বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরনিগমে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হতে পারে রাজ্যের আরও শতাধিক পুরসভায়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এদিন যে সতর্কবার্তা শুনিয়েছে তাতে করে এই পুরনির্বাচন ঘিরে কিন্তু আশঙ্কা ছড়িয়েছে যে আদৌ এই নির্বাচন এই অবস্থায় সম্ভব কিনা!
সেক্ষেত্রে অনুমান চার পুরনিগমের নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের শতাধিক পুরসভার ভোটও কিন্তু পিছিয়ে যেতে পারে। যদিও এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মনে করা হচ্ছে এদিন, স্বাস্থ্য দফতর যে আশঙ্কাবার্তা শুনিয়েছে তাতে করে কমিশন হয়তো দ্রুত রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেখানে কলকাতায় ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে সেখানে কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর ও তা কিছুটা দূরে থাকা চন্দননগর কী রেহাই পাবে সেই গোষ্ঠী সংক্রমণের হাত থেকে! বিশেষজ্ঞরা কিন্তু দাবি করেছেন, শুধু কলকাতাতেই নয় আশেপাশের জেলাতেও সম্ভবত ওমিক্রন ভালো পরিমাণেই ছড়িয়েছে। মানুষ কোভিড টেস্ট করাচ্ছেন না তাই তা সামনে আসছে না। কিন্তু আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই যদি কোভিডের তৃতীয় ঢেউ বাংলায় সুনামির আকারে আছড়ে পড়ে তাহলে ভোট হবে কী করে। বরঞ্চ বিধানসভার মতো এক্ষেত্রেও আশঙ্কা থাকছে ভোটের জমায়েত ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার। সেই অবস্থায় ভোট করানোর কী ঝুঁকি নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নানান মহলের কিন্তু আশঙ্কা চার পুরনিগমের নির্বাচন স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বাকি পুরসভাগুলিরও ভোট স্থগিত হতে পারে। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে এখনও কিছুই জানায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে দ্রুত হয়তো কমিশন এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।