নিজস্ব প্রতিনিধি: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে পরেই মেদিনীপুরের(Midnapur) মাটিতে ফের স্মৃতি হিসাবে ফিরে এসেছে রূপনারায়ণের(Rupnarayan) পাড়ে ঘটে যাওয়া ৭৫ বছর আগেকার এক বড় ট্রেন দুর্ঘটনা((Train Accident)। সেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পরের বছরেই। ওই দুর্ঘটনায় বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০। যদিও সরকারি হিসাবে সেই দুর্ঘটনায় ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছিল সেই তথ্য এখন আর মেলে না। তবে মেদিনীপুরের মাটিতে ঘটে যাওয়া সেটাই যে সব থেকে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ছিল সেটা এখনও জেলার অনেক বয়স্ক প্রবীণ মানুষ মনে করতে পারেন। সেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল কোলাঘাট স্টেশনে(Kolaghat), রূপনারায়ণ নদীর তীরে। দিনটা ছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ অক্টোবর।
আরও পড়ুন সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া নিয়ে কড়া নির্দেশ
‘কোলাঘাট সম্পদ’ নামে স্থানীয় একটি পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সেইদিন কোলাঘাট স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল হাওড়া থেকে ছাড়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস(Purulia Express)। ট্রেনটি খড়গপুর, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, আদ্রা হয়ে পুরুলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময়কার অবিভক্ত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার অনেক মানুষই রাতের সেই ট্রেন ধরতেন বাড়ি ফেরার জন্য। সেদিনও ধরেছিলেন। ট্রেনটি রাত ৯টা নাগাদ হাওড়া থেকে ছেড়ে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কোলাঘাটে এসে পৌঁছায়। কিন্তু ওই ট্রেনটি যখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল তখন সিগন্যালের ভুকে ওই লাইনেই তীব্র গতিতে চলে আসে হাওড়ামুখী নাগপুর এক্সপ্রেস(Nagpur Howrah Express)। এর ফলে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষের অভিঘাতে দুটি ট্রেনেরই ১০-১২টি কামরা কার্যত দুমড়ে মুড়ে ধ্বংসাবশেষের চেহারা নেয়। সেদিন দুটি ট্রেনই ভেসে গিয়েছিল রক্তের স্রোতে। শুধু তাই নয়, সেই দুর্ঘটনার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন দুটিতে ব্যাপক লুঠপাঠও চলেছিল বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন ২৫টি আদিবাসী সংগঠনের ডাকে বাংলা বনধ, নাকাল জনতা
যারা এখনও সেই দুর্ঘটনার কথা মনে করতে পারেন তাঁরা জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনার সময় কোলাঘাটে রেলের একটি সেতুই ছিল, আর তা ছিল খোলা। তখন কোলাঘাট ছিল পাঁশকুড়া থানার অধীনে। ওই দুর্ঘটনার দিন রাতে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। তা চলছিল কয়েক দিন ধরেই। বৃষ্টির জেরে রূপনারায়ণের জলও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। দুর্ঘটনার অভিঘাতে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের ৩-৪টি বগি সেই ভরা নদীতে গিয়ে পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় খুব কম করে ৪০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন হাজারের বেশি মানুষ। দুর্ঘটনার পরের দিন পুলিশ দেহগুলির উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ চিরতরে হারিয়ে যান। মৃতদের অনেকের পরিচয়ও জানা যায়নি। এখন করমণ্ডলের দুর্ঘটনা সেই স্মৃতি নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।