নিজস্ব প্রতিনিধি: একা রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব দোসর। বঙ্গ বিজেপিতে এখন এই দশাই চলছে। নিত্যদিনই এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে যার জেরে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে রীতিমত মুখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যম থেকে আমজনতার মধ্যে। কিছুদিন আগেই দলের রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলে দলেরই একাংশ। সেই ঘটনার নেপথ্যে ছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে করা অমিতাভবাবুর এক মন্তব্য। সেই বিবাদের জল এখনও থিতু হয়নি। তারই মধ্যে এবার তাঁকে ‘কলঙ্কিত মাতাল’ বলে আক্রমণ করার পাশাপাশি তাঁকে ‘গরু পাচারকারী’ বলেও আক্রমণ করা হল। সেই মর্মেই এখন পোস্টার পড়েছে পূর্ব রেলের শিয়ালদা বনগাঁ শাখার একাধিক লোকাল ট্রেনের কামরায়। আর এই ঘটনা ঘিরেই এখন তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।
লোকাল ট্রেনের একাধিক কামরায় যে পোস্টার পড়েছে তাতে লেখা হয়েছে, ‘মদ্যপ লুচ্চা চিটিংবাজ ওজিএস অমিতাভ চক্রবর্তীর কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। রাজ্য বিজেপিকে বাঁচাতে গরু পাচারকারী সাধারন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণ চাই। গরু পাচারকারী অমিতাভকে গ্রেফতার করতে হবে।’ এই পোস্টার ঘিরেই এখন শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, তাঁদের নেতা ও দলের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এই ‘চক্রান্ত’ করেছে রাজ্যের শাসক দল। যদিও তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট দাবি করা হয়, এই পোস্টার সাঁটানোর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ঘটনাটিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যা দিচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। তবে মনে করতা হচ্ছে এই ঘটনায় হাত রয়েছে বিজেপিরই বিক্ষুব্ধ শিবিরের একাংশের। ভুললে চলবে না বনগাঁ এলাকার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এখন বিক্ষুব্ধ বলেই শোনা যাচ্ছে। তাঁর অনুগামীরা যে এহেন ঘটনা ঘটায়নি সে কথা জোর দিয়ে কেউই বলতে পারবে না।
ঘটনাচক্রে এদিনই কলকাতায় পোর্ট ট্রাস্টের এক অতিথিশালায় শান্তনু ঠাকুরের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে বসতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা। এদিনই এক ছাতার তলায় আসতে পারে রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশ। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির নতুন পদাধিকারী মণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের মধ্যে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব না থাকায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর-সহ কয়েক জন মতুয়া বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, পদাধিকারী মণ্ডলীতে অধিকাংশ পুরনো নেতা বাদ পড়ায় বিজেপি-র একাংশ ‘ক্ষুব্ধ’। তাঁরা দলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকেও বেরিয়েও যান। এই নিয়ে যখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে যখন তোলপাড় শুরু হয়েছে ঠিক তখনই দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নির্দেশে দলের সব ডিপার্টমেন্ট এবং সেল ভেঙে দেওয়া হয়েছে গতকাল রাতেই। তা নিয়েও নয়া বিতর্ক শুরু হয়েছে। এরই মাঝে অমিতাভ চক্রবর্তীকে এহেন আক্রমণ বঙ্গ বিজেপিকে নতুন ক্ষোভের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিল।