নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটের পরে বাংলার(Bengal) বুকে হয়ে যাওয়া সব নির্বাচনেই ধারাবাহিক হারের মুখে পড়ছে পদ্মশিবির। জেতা আসনের উপনির্বাচনেও তাঁরা আসন ধরে রাখতে পারছে না। দল ছাড়ছেন সাংসদ থেকে বিধায়ক। মুখ ঘোরাচ্ছেন দলেরই আদিনেতাকর্মী থেকে সমর্থকেরা। তার থেকেও বড় কথা নিত্যদিন পদ্মশিবিরের কোন্দল নেমে আসছে বাংলার রাজপথে। এদিকে দলের নম্বর টু তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) ২৪’র ভোটের জন্য বাংলা থেকে ৩৫টি আসন জয়ের টার্গেট দিয়ে গিয়েছেন। সেই টার্গেট পূরণের ধারেকাছেও যে বিজেপি(BJP) যেতে পারবে না সেটা অতিবড় অন্ধভক্তরাও এখন বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু হাতগুটিয়ে বসে থাকলে তো হবে না! দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরতে হবে তো যে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব জেতার লক্ষ্যে কিছু তো করছে। অগত্যা তাই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা(Pradhanmantri Vishwakarma Yojana) নিয়ে বাংলার মাঠে নামছেন বঙ্গ বিজেপি’র নেতারা।
সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার মাধ্যমে বাংলার দর্জি, রাজমিস্ত্রি, কর্মকার, স্বর্ণকার, কাঠমিস্ত্রিসহ ১৮টি ক্ষেত্রের কারিগরদের নিজেদের দিকে টানতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। এই যোজনার মাধ্যমে এই ১৮টি ক্ষেত্রের কারিগরদের কেন্দ্র সরকার এককালীন ৩ লক্ষ টাকা ঋণ দিচ্ছে তাঁদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য। সেই সমগে করা হচ্ছে আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। সেই প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক শিল্পী দৈনিক ভাতা পাবেন ৫০০ টাকা হারে। প্রশিক্ষণ শেষে মিলবে ৩ লক্ষের ঋণ। সেই প্রকল্পকে সামনে রেখেই বাংলার কারিগর সমাজকে পাশে টানতে মাঠে নামছে বঙ্গ বিজেপি। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য বিজেপির পাঠানো প্রায় তিন লক্ষ নামের তালিকায় কেন্দ্র সিলমোহর দেবে, এমনটাই জানানো হয়েছে। এই ১৮টি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই OBC শ্রেণিভুক্ত। বাংলায় বিজেপির পক্ষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া কঠিন। তাই বিকল্প হিসেবে এই OBC-দের এখন কাছে টানতে চাইছে বিজেপি। যদিও তাঁদের এই পরিকল্পনা কতখানি সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
কেন প্রশ্ন থাকছে? এই নিয়ে মুখ খুলেছেন বঙ্গ বিজেপির আদি নেতাকর্মী থেকে বসে যাওয়া ক্ষুব্ধ নেতারা। তাঁদের দাবি, এই প্রকল্পকে সামনে রেখে আদতে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের পছন্দের লোকদের পাইয়ে দিতে চাইছে। লোকসভা ভোটের মুখে বুথে বুথে ‘সুবিধাভোগী’ গোষ্ঠী তৈরি করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের রাজনীতিকরণের মাধ্যমে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের টাকা পাইয়ে দিতে চাইছে। আমজনতার জন্য নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) সরকারের বরাদ্দ অর্থ ‘নিজের লোকেদের’ পাইয়ে দিতে চাইছে। আর তাই ১৮টি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিজেপি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরই এই সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হবে। যারা বিজেপি বান্ধব নন তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি বুথ থেকে এইরকম ৫জন কারিগরের নাম বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
যদিও এই প্রকল্পের আড়ালে বিরাট আর্থিক দুর্নীতির আশঙ্কা থাকছে বলে অভিমত বিজেপিরই আদি নেতাকর্মীদের। তাঁদের দাবি, প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের কেন্দ্রীয় সরকারের Common Service Center বা CSC’র মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া মসৃণ করতে জেলায় জেলায় স্থানীয়ভাবে বিজেপির তরফে ক্যাম্প করা হবে। বহু মানুষ ঋণ পাওয়ার আশায় আবেদন করবেন। সেক্ষেত্রে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পকেটে কাটমানির ভাগ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই। সেই সঙ্গে একুশের ভোটের পরবর্তী সময়ে দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাঠানো কোটি কোটি টাকা যেমন এদিক-ওদিক হয়েছে, ঠিক তেমনই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনায় টাকাও এদিক ওদিক হবে। দেখা যাবে কারিগরদের পকেটে যে টাকা যাওয়ার কথা তা চলে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কয়েকজনের পকেটে।