এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

কেষ্ট’র গ্রেফতারিতে খুশি স্বামীহারা পুতুল চক্রবর্তী

নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার বুকে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল ২০১১ সালে। বামের ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে তখন ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই থেকেই বাংলার বুকে রাজত্ব করছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। সেই পরিবর্তনের ৩ বছর পরের কথা। বীরভূমের(Birbhum) বুকে তখন বেতাজ বাদশা দিদিমণির ‘কেষ্ট’ থুড়ি অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol)। সেই সময় অর্থাৎ ২০১৪ সালের মে মাসে বীরভূম জেলার পারুই থানা এলাকায় দলের এক সভা থেকে দাঁড়িয়ে কেষ্ট বলেছিলেন, ‘পুলিশ কথা না শুনলে পুলিশের ওপর বোমা মারুন’। সেই ঘটনার কয়েকদিন পরেই ৩ জুন বীরভূম জেলারই দুবরাজপুর থানা(Dubrajpur PS) এলাকার যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আউলিয়া-গোপালপুরে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোমার আঘাতে গুরুতর ভাবে জখন হন বছর পঁয়ত্রিশের অমিত চক্রবর্তী(Amit Chakrabarty)। তিনি রাজ্য পুলিশের(West Bengal State Police) সাব ইন্সপেক্টর(SI) হিসাবে দুবরাজপুর থানায় ডিউটিতে ছিলেন। ৫৫ দিন হাসপাতালে লড়াই চালিয়ে তিনি মারা যান। এখন অনুব্রত সিবিআইয়ের(CBI) হাতে গ্রেফতার হওয়ায় খুশি হয়েছেন সেই অমিত চক্রবর্তীর স্ত্রী পুতুল চক্রবর্তী(Putul Chakrabarty)।

ঠিক কী হয়েছিল অমিতের সঙ্গে? যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আউলিয়া-গোপালপুরে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোমার আঘাতে গুরুতর ভাবে জখম হন অমিত। ঘটনার পরে অমিতবাবুর সহকর্মীরা তাঁর পেটে গামছা বেঁধে নিয়ে যান দুবরাজপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। বোমার ঘায়ে অমিতবাবুর অন্ত্র ও নাড়িভুঁড়ি ফেটে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। বাঁ দিকে পাঁজরের নীচ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত মাংস বলে কোনও বস্তু কার্যত ছিল না। নার্সিংহোমে কোনও রকমে গজ ভরে অন্ত্র ঠেলে শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাতেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। তাই সেই অবস্থাতেই পেটে গামছা বেঁধেই অমিতকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের বেসরকারি মিশন হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে জরুরি বিভাগে ভর্তিও করা হয় সেদিনই। ওই দিন রাতেই এক দফা অস্ত্রোপচার করে বৃহদন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের বিভিন্ন অংশ জোড়া হয়। কিন্তু, ক্ষত এতটাই ছিল যে ঠিক ভাবে তা জোড়া লাগানো যাচ্ছিল না। ওই অপারেশনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা পরবর্তীকালে জানিয়েছিলেন, সেদিন দফায় দফায় অস্ত্রোপচার করেও ওই সব অংশ জোড়া লাগানো যায়নি। কখনও ক্ষুদ্রান্ত্রের অংশ ফেটে যাচ্ছিল, সেটা ঠিক করতে গিয়ে আবার বৃহদন্ত্রের অংশবিশেষ ফেটে গিয়েছিল। উরু থেকে মাংস কেটে ‘গ্রাফটিং’-এর চেষ্টাও করা হয়েছিল। তা-ও পুরো করা যায়নি।

অমিতবাবুর মোট ৭ বার অপারেশন হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। অর্থাৎ যে ৫৫ দিন ধরে তিনি দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই সময়েই তাঁর মোট ৭ বার অপারেশন হয়েছিল। সপ্তম অস্ত্রোপচারের পরে এত রক্তক্ষরণ শুরু হয় যে, অমিতবাবু কোমায় চলে যান। ধীরে ধীরে গোটা শরীরে সেপ্টিসেমিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর যুঝতে পারেননি অমিত। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জুলাই মারা যান তিনি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পেটে বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হওয়া এবং তার জেরে ‘সিভিয়ার সেপ্টিসেমিয়া’। সেই ঘটনা আজও ভুলতে পারেননি অমিতের স্ত্রী পুতুল চক্রবর্তী। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি একদিকে যেমন অনুব্রত মণ্ডলকেই এখনও দায়ী করেন তেমনি এটাও ভুলে যাননি যে অমিতের চিকিৎসার ব্যায়ভার সামলানোর জন্য তাঁর সহকর্মী থেকে পুলিশ সুপাররা কীভাবে আর্থিক সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভুলে যাননি অমিতকে গার্ড অফ অনার দিয়েছিল দুবরাজপুর থানার পুলিশ। এটাও ভোলেননি যে কেষ্ট বচন ‘পুলিশকে বোমা মারুন’ –এর জন্যই অমিতের ওপর বোমা মেরেছিল দুষ্কৃতীরা।

এখন যখন কেষ্ট সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তখন পুতুল কিন্তু খুশি। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের অমিতের বাড়িতে বসে তিনি সাফ জানালেন, ‘৮ বছর ধরে যার কোনও শাস্তি হয়নি আজ সে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। আমি খুশি।’ কথা বলতে বলতে তাঁর দুই চোখের পাতা বার বার ভিজে যাচ্ছিল। পুতুলের অভিযোগ, ঘটনার সময় অনুব্রতের দাপট এতটাই বেশি ছিল যে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে অমিতের ওপর বোমাবাজির ঘটনার তদন্ত ভালমত করাই হয়নি। অনুব্রতর চাপে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অমিতবাবুর মৃত্যুকালীন জবানবন্দী পর্যন্ত নেননি। পুতুলের সাফ বক্তব্য, ‘একজন পুলিশ যখন তদন্ত করবে তখন তাঁর ওপরে কিসের চাপ? উপরওয়ালার চাপ? ওপরওয়ালার চাপ মানে এখানে অনুব্রতের চাপ ছিল বলেই আমি মনে করি। ওই ঘটনার জন্য অনুব্রতই দায়ী। পারুইয়ের সভায় দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডল যদি উস্কানিমূলক ভাবে পুলিশকে বোমা মারো মন্তব্য না করতেন তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। মুখ্যমন্ত্রীও এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও স্টেপ নেননি। যদি স্টেপ নিতেন তাহলে হয়তো এভাবে আমার স্বামীকে হারাতে হত না। সরকারি কর্তব্য করতে গিয়ে অকালে প্রান হারাতে হতো না আমার স্বামীকে।’ 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বিজেপির মিছিল থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের দিকে ইট ছোড়ার অভিযোগ, রিপোর্ট তলব কমিশনের

মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তোলাবাজি, গ্রেফতার দাপুটে বিজেপি নেতা

সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো, বিজেপি নেতার ভিডিয়ো ঘিরে শোরগোল

মহিলা তৃণমূলকর্মীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ বিজেপি কর্মী

ডায়মন্ড হারবার ও আনন্দপুর থানার ওসিকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন

উত্তরপাড়ার মাখলাতে দৃষ্টিহীনদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজর কাড়া ফলাফল

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর