27ºc, Haze
Tuesday, 28th March, 2023 11:06 pm
কৌশিক দে সরকার: পাহাড়ের রাজনীতিতে পট পরিবর্তনের আভাস মিলেছে আগেই। এবার সেই পরিবর্তনের সম্ভাবনাই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বাংলার শাসক দলের। কেননা সেখানে কার্যত ওস্তাদের মতো খেলা দেখাচ্ছেন অনীত থাপা(Anit Thapa)। খুব সামান্য পরিবার থেকে উঠে আসা এই নেতার নিয়ন্ত্রণেই এখন চলে গিয়েছে পাহাড়ের বুকে উন্নয়ন ও প্রশাসনের অন্যতম অঙ্গ জিটিএ(GTA)। পাশাপাশি দার্জিলিং পুরসভাও(Darjeeling Constituency) এখন তাঁরই দলের দখলে। তাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না নরেন্দ্র মোদির বিজেপি(BJP), সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ(GNLF), বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা(GJMM)। এমনকি এঁটে উঠতে পারছেন না যার হাত ধরে পাহাড়ের রাজনীতিতে অনীতের উত্থান সেই বিনয় তামাংও। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলকেও(TMC) ভাবতে হচ্ছে অনীত কী তাঁদের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে চাইছেন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে?
আরও পড়ুন KMC’র কর্মীরা বছরে ১৩ মাসের মাইনে পাবেন
তৃণমূল বাংলায় ক্ষমতায় এসেছে ২০১১ সালে। এর মধ্যে আরও দুটি লোকসভার নির্বাচন হয়ে গিয়েছে বাংলার বুকে। ২০১৪ সালের নির্বাচবন এবং ২০১৯ সালের নির্বাচন। আরও একটি নির্বাচন কার্যত বাংলার দুয়ারে কড়া নাড়ছে। কিন্তু রাজ্যের যে সমস্ত লোকসভা কেন্দ্রে এখনও একবারের জন্য হলেও ঘাসফুল ফোটেনি তার অন্যতম হল দার্জিলিং লোকসভা(Darjeeling Constituency) কেন্দ্রটি। ২০০৯ সাল থেকেই এই লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে বিজেপির দখলে। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে পাহাড়ের রাজনীতিতে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। বিজেপির পায়ের তলার মাটি যেমন বাংলার বুকে ক্রমশ আলগা হয়েছে তেমনি সম্পূর্ণ ভাবে পাহাড়ের রাজনীতিতে প্রভাব হারিয়ে বসে আছেন বিমল গুরুং এবং তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু কালিম্পংয়ে জয়ী হয় মোর্চা ও তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। আবার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা সমতলের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে শিলিগুড়ি, মাটিগড়া-নকশালবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু চোপড়ায় জয়ী হয় তৃণমূল। সেই হিসাবে দেখলে পাহাড়ে আগামী লোকসভা কেন্দ্রেও বিজেপিরই জেতার কথা। গেরুয়া শিবির থেকেও সেই চিন্তাভাবনা নিয়ে সাংসদ রাজু বিস্তাকেই আবারও পাহাড়ে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত একপ্রকার নিয়ে নেওয়াই হয়েছে।
আরও পড়ুন কুলটির কয়লাখনিতে ভয়াবহ ধস, আটকে জন ২৫ কর্মী
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে হওয়া শিলিগুড়ি পুরনিগম এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে কার্যত তৃণমূল সুনামি বয়ে গিয়েছে। অথচ দুটি ক্ষেত্রেই বিজেপি দাবি করেছিল তাঁরাই জিততে চলেছে এবং তাঁরাই বোর্ড গঠন করবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও সেরকমই কিছু হবে ভেবেছিলেন। কেননা শিলিগুড়ি তথাকথিত তৃণমূল বিরোধী হিসাবেই নিজেকে তুলে ধরেছে। তা সে পুরনিগমেই হোক কী মহকুমা পরিষদে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তৃণমূল একক ক্ষমতাতেই শিলিগুড়ি পুরনিগম ও মহকুমা পরিষদে বিপুল ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছে। যা কার্যত বলে দিচ্ছে সমতলে বিজেপি হাওয়া আর কাজ দিচ্ছে না। যার অর্থ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা সমতলের ৪টি বিধানসভা এলাকা থেকেই লিড তুলতে পারে তৃণমূল। সেক্ষেত্রে পাহাড়ের ৩টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি লিড পেলেও জয়ের মুখ নাও দেখতে পারে। কিন্তু তৃণমূলকে ভাবাচ্ছেন অনীত থাপা। কেননা অনীত জিটিএ নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীদের জিতিয়েছেন কার্যত একার জোরে। সেখানে বিজেপি, গুরুং, তামাং, জিএনএলএফ কেউ কিছুই করে উঠতে পারেননি। পাহাড়ের মানুষ অনীতকেই বেছে নিয়েছেন তাঁদের উন্নয়নের কাণ্ডারী ও নয়া নেতা হিসাবে। দার্জিলিং পুরসভা এলাকায় জন এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি বিপুল আসনে জয়ী হলেও সেখানেও থাবা বসিয়েছেন অনীত। এডওয়ার্ডের দলে ভাঙন ঘটিয়ে দখল করে নিয়েছেন দার্জিলিং পুরসভা। এডওয়ার্ড হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট অবধি দৌড়াদৌড়ি করেও কিছুই করে উঠতে পারেননি।
আরও পড়ুন আপনার অজান্তেই আপনার আধারের সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বর বদলে যেতে পারে
এহেন অনীত যদি এবার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চান তাহলে তৃণমূল কী করবে? এটাই এখন ভাবাচ্ছে জোড়াফুলের মাথাদের। তবে এটা ঘটনা যে অনীত নিজে যেহেতু এখন জিটিএ’র চেয়ারম্যান এবং প্রকাশ্যে এখনও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে কিছু ঘোষণা করেননি। বরঞ্চ অনীতের সমর্থন নিয়েই তৃণমূল লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে ঘাসফুল ফোটাতে চাইছে। তবে শেষ মুহুর্তে অনীত মুড বদল করলে তখন তৃণমূলকে কিছুটা হলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সেই কারণেই তৃণমূল এখন অনীতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই অপেক্ষা করতে চাইছে। সেই সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের আগে পাহাড়ে পঞ্চায়েত ও ৩টি পুরসভার নির্বাচন করিয়ে নিতে চাইছে। সেই নির্বাচনে তৃণমূল সহ বিজেপি, মোর্চা, হামরো পার্টি এবং অনীতের দলের ফলাফল কী হয় সেটা দেখে নিতে চাইছেন ঘাসফুল শিবির। সেই ফলাফল খতিয়ে দেখেই পাহাড়ের জন্য প্রার্থী পদের নামগুলি ঝাড়াইবাছাই করতে শুরু করে দেবেন জোড়াফুলের মাথারা, অন্তত এমনতাই জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রে।