নিজস্ব প্রতিনিধি: কোজাগরীর আগেই সোহাগীর ঘরে এসেছিল লক্ষ্মী। মন তাই খুশিতে ভরে উঠেছিল। কিন্তু বুঝতে পারেননি, তাঁর নিজের মানুষই সেই লক্ষ্মীকে শেষ করে দেবে। সেই খুদে কচি দুধের শিশুকে নিজে হাতে খুন করে এখন সংবাদের শিরোনামে সোহাগীর স্বামী আশ্বিনাথ সোরেন৷ ঘরে ঘরে যখন মা লক্ষ্মী আরাধিতা হলেন সেই সময়েই এক মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হল চিরতরে আরও এক লক্ষ্মীকে। এছবি আমাদের বাংলারই। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানার তুলসিগ্রামের ঘটনা।
বছর চারেক আগে পুরুলিয়ার ভাতুইকেন্দ গ্রামের বাসিন্দা সোহাগি সোরেনের সঙ্গে পেশায় কৃষিজীবী আশ্বিনাথের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সোহাগি। ১৬ দিন আগে ফের আরেক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় সে। লক্ষ্মীপুজোর আগে কন্যা সন্তান পেয়ে ভীষণ খুশিই হয়েছিল সোহাগী। ভেবেছিল ঘরে মা লক্ষ্মী নিজেই এসেছেন। ঠিকও করেছিল, মেয়ের নাম রাখবে শারদলক্ষ্মী। কিন্তু এই মেয়ের জন্মকে মেনে নিতে পারেনি আশ্বিনাথ৷ কচি দুধের শিশু ওই মেয়েকে মেরে ফেলার জন্য সোহাগীর ওপর চাপ দিতে শুরু করেছিল সে৷ কিন্তু সোহাগী রাজি না হওয়ায় নিজে হাতে সে ওই ১৬ দিনের কন্যাসন্তানকে খুন করে৷
অভিযোগ, দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তানের হওয়ায় অশান্তি শুরু হয়েছিল সোহাগীর সংসারে। আশ্বিনাথ-সহ সোহাগীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন শুরু করে। গত সোমবার সংসারের সমস্ত কাজ সামলে বাড়ি থেকে একটু বার হয়েছিল সোহাগি। বাড়িতে রেখে গিয়েছিল তাঁর ১৬ দিনের কন্যাসন্তানকে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর আর মেয়েকে দেখতে পায়নি সোহাগি। পরিজনদের কাছে খোঁজখবর নেন। তাঁরাও সদুত্তর দিতে পারেনি। তাতেই সন্দেহ হয় সোহাগীর। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে থানায় ছুটে যায় সে৷ শুরু থেকেই তাঁর সন্দেহ ছিল স্বামীর উপর৷ পুলিশ সব শোনার পর তাই আশ্বিনাথকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়৷ তার পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে৷ জেরার মুখে সে খুনের কথা মেনে নেয়৷ জানায়, মেয়েকে কুয়োয় ফেলে খুন করেছে সে। প্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহটি প্লাস্টিকে মুড়ে গ্রাম থেকে দূরে ধানজমিতে পুঁতে রেখেছে৷ আশ্বিনাথের স্বীকারোক্তির পর ছাতনা থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে৷ ধৃতকে ইতিমধ্যেই পেশ করা হয় বাঁকুড়া জেলা আদালতে৷ বিচারক তাকে চারদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন৷