নিজস্ব প্রতিনিধি: গরু পাচারের(Cattle Smuggling) ঘটনার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সিবিআই(CBI)। সেই সূত্রেই তাঁরা গ্রেফতার করেছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে(Anubrata Mondol)। একই সঙ্গে বুধবার সকাল থেকেই সিবিআইয়ের একাধিক টিম হানা দিয়েছে বোলপুর শহরে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ দোলন কুমার দে, বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ রায়, মণীষ কোঠারির বাড়িতে। এদের মধ্যে বিশ্বজ্যোতি আবার তৃণমূল কাউন্সিলর। বোলপুর(Bolpur) শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তিনি। এই ৪ জনের বাড়িতেই হানা দিয়ে সিবিআই টিমের সদস্যরা তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদও চালাচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বজ্যোতিকে আটকও করা হয়েছে। প্রয়োজনে এদিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেরই নজর কেড়েছে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে পুলিশ(West Bengal State Police) কর্মীদের তৎপরতা। আর তার জেরেই উঠছে প্রশ্ন। সিবিআই যাকে গ্রেফতার করেছে তাঁর বাড়িতে রাজ্যের পুলিশকর্মীরা কী করছেন?
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের পরামর্শ মেনে ২০১৩ সালের গোড়ায় রাজ্যে যে ক’জন তৃণমূল নেতাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, সেই তালিকায় ছিলেন অনুব্রতও। জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ‘জ়েড ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা পেতেন। তাঁকে সর্বক্ষণ ঘিরে থাকতেন সশস্ত্র ছ’জন দেহরক্ষী। এঁদেরই এক জন ছিলেন সেহগাল হোসেন, যিনি নিজেও গরু পাচার মামলায় আপাতত আসানসোল জেলে অনুব্রতের কাছাকাছিই রয়েছেন। সেই সময় থেকে অনুব্রতের বাড়ি পাহারাতেও রাজ্য পুলিশের চার কর্মীকে মোতায়েন করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বীরভূমের কেষ্টর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়িয়ে নিযুক্ত করা হয় চার সশস্ত্র মহিলা রক্ষীকেও। এমনকি বিভিন্ন মিটিং-মিছিল কিংবা জনসভা করার সময় বম্ব স্কোয়াডের একটি টিমও মোতায়েন থাকে অনুব্রতের জন্য। চলতি মাসে গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত গ্রেফতার হতেই তুলে নেওয়া হয়েছে ‘জ়েড ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা এবং চার মহিলা নিরাপত্তা রক্ষীকে। তবে বর্তমানে তাঁর বাড়ির নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন রয়েছেন রাজ্য পুলিশের এক জন এএসআই পদমর্যাদার অফিসার এবং তিন জন কনস্টেবল। অনুব্রত জেল হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও এখনও কেন তাঁর বাড়িতে রাজ্য পুলিশ ‘পাহারা’ দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেন থেকে রিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন এখনও বোলপুর শহরের নিচুপট্টিতে অনুব্রতের বাড়ি ‘পাহারার’ দায়িত্বে এখনও বহাল রয়েছেন রাজ্য পুলিশের কর্মীরা!
সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের দাবি, ‘গরু পাচারের মতো গুরুতর মামলায় যিনি অভিযুক্ত হিসাবে জেলে রয়েছেন, তাঁর বাড়িতে পাহারায় সরকারি পুলিশকর্মীদের থাকার বিষয়টি বহু মানুষ অন্য চোখে দেখছেন। কেন পুলিশি প্রহরা থাকবে ওই বাড়িতে সেটা আমাদেরও প্রশ্ন।’ বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডলের দাবি,‘প্রশাসন সরকারের দলদাস হিসাবে কাজ করছে। তাই এক জন অপরাধীর বাড়িতেও এখনও রাজ্য পুলিশের কর্মী দিয়ে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।’ যদিও বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, যে হেতু অনুব্রত মণ্ডল এই মুহূর্তে জেল হেফাজতে রয়েছেন, তাই ওঁর নিরাপত্তারক্ষীদের সরানো হয়েছে। তবে, পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ‘হাউস গার্ড’ রয়েছে।’