নিজস্ব প্রতিনিধি: এ যেন উলোটপুরাণ। রাজ্যের দিকে দিকে বিভিন্ন সমবায় সমিতি বা ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির নির্বাচনে যখন জোড়াফুলের রমরমা চোখে পড়ছে ঠিক তখনই উল্টো ছবি ধরা পড়ল রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির(Akhil Giri) খাস তালুক রামনগরের(Ramnagar) বুকে। সেখানে দক্ষিণ শীতলা মিলনী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনে বাজিমাত করেছে গেরুয়া শিবির, যা কিছুটা হলেও মানরক্ষা করেছে অধিকারী পরিবারেরও। পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলা দীর্ঘদিন অধিকারীদের প্রভাবিত জেলা হিসাবেই রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। বিশেষ করে কাঁথি(Contai) মহকুমা এলাকায় অধিকারীদের প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। অধিকারীরা যখন তৃণমূলে ছিলেন তখনও তাঁদের সঙ্গে একই দলে থাকা অখিল গিরির সম্পর্ক ভাল ছিল না। অধিকারীরা তৃণমূল(TMC) ছাড়ার পরে কদর ও গুরুত্ব দুই বেড়েছে গিরি শিবিরের। অখিলবাবু মন্ত্রীও হয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের একের পর এক সমবায় নির্বাচনে মুখ পুড়ছিল বিজেপির(BJP)। কিন্তু রামনগরের ফল সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি তুলে ধরল।
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগরের বিধায়ক যার অবস্থান কাঁথি মহকুমা এলাকায়। রবিবার সেই রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের এলাকায় থাকা কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোল মৌজার দক্ষিণ শীতলা মিলনী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচন ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সেই নির্বাচন শেষে দেখা যায় সমিতির ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জিতেছেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। বাকি ২ আসনে জিতেছে তৃণমূল। য়ার বিজেপির সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেওছেন বড় ভোটের ব্যবধানে। আর তার জেরেই অস্বস্তিতে পড়েছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর শিবিরের নেতা থেকে কর্মীরা। সামান্য সমবায় সমিতির নির্বাচনে এই ফল হলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামনগরের বুকে কী হাল হতে পারে তৃণমূলের তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের শাসক দলের প্রতি আমজনতার সমর্থনের বিষয়টিও। কেন এই ফল হল তা যেমন জোড়াফুল শিবিরকে ভাবাচ্ছে তেমনি প্রশ্ন উঠছে এই ফলাফলের নেপথ্যে কী পার্থ-কেষ্ট কাণ্ডের ছায়া কাজ করেছে যা আমজনতাকে শাসক বিমুখ করে তুলেছে?
দক্ষিণ শীতলা মিলনী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনে জয়ের পরে রবিবার রাতে গেরুয়া শিবিরে আবির খেলা শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সোমবার সকালে এই ফলাফল নিয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র শেখর মন্ডল জানিয়েছেন, ‘এলাকার মানুষ এই নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন। ভোটকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় সীমাহীন সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। আমাদের মহিলা প্রার্থীকে হেনস্থা করা হয়েছে। তার জবাব এলাকার বাসিন্দারারা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দিয়েছেন। বোর্ড গঠন করে আমরা এই সমবায়ের উন্নয়নে গতি আনার চেষ্টা করব।’ এই নির্বাচনী ফল নিয়ে তৃণমূলের তরফে কেউ মুখ না খুললেও দলের কর্মীরা এই পরাজয়ের নেপথ্যে বাম-বিজেপি জোটকে দায়ী করেছেন। যদিও এই নির্বাচনী ফলের পিছনে দলের গোষ্ঠীকোন্দল কাজ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।