নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার মন খারাপ। কেননা মা চলে গিয়েছেন এ বছরের মতো। আবারও একটা বছরের অপেক্ষা। কিন্তু ফরাসডাঙায় এখন সাজ সাজ রব। মা যে আবারও আসছেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে তাই কোমর বাঁধছেন ফরাসডাঙার জনতা। দুর্গাপুজো চলে যেতে যখন সকলের মন খারাপ হয়ে যায় তখন কার্যত কাউন্টডাউন শুরু করে দেন ফরাসডাঙার মানুষ। এই ফরাসডাঙাকে সকলে চেনেন চন্দননগর(Chandannagore) বলে। হুগলি(Hooghly) জেলায় গঙ্গার(Ganges) পাড়ে গড়ে ওঠা এই ফরাসী উপনিবেশে(French Colony) কালিপুজোর পরেই বেজে ওঠে উৎসবের বাদ্যি। সেই উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজোর(Jagadhatri Puja)। চারদিন ধরে চলা সেই উৎসব চন্দননগরের প্রধান উৎসব। সেই উৎসবের শরিক হতে রাজ্যের নানাপ্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। ৪ দিনের জন্য গোটা শহর এক মিলনমেলার চেহারা নেয়। এবার সেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে চন্দননগরের বুকে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো ঠিক কার হাত দিয়ে শুরু হয় তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। তবে শহরের সবচেয়ে পুরাতন বারোয়ারি যে চালপট্টীর ‘আদি মা’ তা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। এখনও অবশ্য চন্দননগর পুরনিগম ও ভদ্রেশ্বর পুরসভা এলাকা নিয়ে ৩০০’র কাছাকাছি বারোয়ারি পুজো হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশে থিম পুজোও শুরু হয়েছে। তবে পাশাপাশি সাবেকি আবহ ধরে রেখেও বিস্তর পুজো হচ্ছে। থিমের জোয়ারে গা ভাসালেও চন্দননগরে প্রতিমার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা কিন্তু এখনও অনেক কম। কার্যত হাতে গোনা ২-১টি জায়গা বাদে কোথাও থিমের প্রতিমা দেখা যায় না। বরঞ্চ দেখা যায় সুউচ্চ ঢাকের সাজের সাবেক প্রতিমা। আর এই প্রতিমার আকর্ষণেই বছর বছর হাজারো মানুষ ছুটে আসেন চন্দননগরের বুকে। রাত জেগে পায়ে হেঁটে তাঁরা এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে গা ভাসান। আর যে কথা না বললেই নয় তা হল চন্দননগরের আলোকসজ্জা। কার্যত এই আলোর খেলা, আলোর কারসাজি দেখতে দশমীতে ভিড় জমান লাখো মানুষ। তাই চন্দননগরের আলোর ওয়ার্কশপগুলিতে এখন কার্যত স্নান খাওয়া ভুলে জোর কদমে কাজ চলছে।
কোভিডের জেরে ২০২০ সালের চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো বেশ ধাক্কা লেগেছিল। অধিকাংশ জায়গায় হয়েছিল কাঠামো বা পটে পুজো। ২০২১ সালে সেই তুলনায় অনেকটাই খোলামেলা পরিবেশ পুজোর আয়োজন হয়েছিল চন্দননগরের বুকে। এবারে তো কার্যত সেখানে পুরানো চেহারাই ফের ফিরে আসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই সেখানে জোরকদমে চলছে মণ্ডপ নির্মাণের কাজ। জি টি রোড এলাকার আশেপাশে তো বটেই হরিদ্রাডাঙা, বোড়ো, কুণ্ডঘাট, লক্ষ্মীগঞ্জ, নাড়ুয়া, বারাসত গেট, বাগবাজার, বিদ্যালঙ্কা, খলিসানী, গোন্দলপাড়া, হাটখোলা প্রভৃতি এলাকায়। চন্দননগরে বেশির ভাগ পুজো হয় বৈষ্ণবমতে ৪ দিন ধরে। কার্যত ইদানিংকালে পঞ্চমীর সন্ধ্যা থেকেই জনস্রোতে ভাসতে থাকে চন্দননগর। সেই ভিড়ের ঢল চলে দশমীর রাত অবধি। এবারেও সেই মহোৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে চন্দননগরের বুকে।