নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ২৬ অক্টোবর রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে তাঁর স্বামীর প্রাণনাশ করা হবে। এক লাইনের চিঠিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘আপনার স্বামী নিহত হবেন। কেউ আপনার স্বামীকে বাঁচাতে পারবে না।’ চিঠিতে গৌরহরি মিশ্র নামের একজনের সইও ছিল। একই সঙ্গে তাতে লেখা ছিল, প্রযত্নে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের প্রধান মহুয়া ঘোষ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশকে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছিল। কিন্তু সোমবার গভীর রাতে এই ঘটনায় এক চিকিৎসক সহ মোট ৩জনকে গ্রেফতার করে। এই ৩জন হল চিকিৎসক অরিন্দম সেন, তার টাইপিস্ট বিজয়কুমার কয়াল এবং চিকিৎসক অরিন্দমের গাড়ির চালক রমেশ সাউ। মঙ্গলবার সকালেই তাদের আদালতে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আলাপনবাবুকে খুন করার হুমকি চিঠির কাণ্ডে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল। কিন্তু তাঁরা কোনও সূত্র পাচ্ছিলেন না। তবে তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, গত ২৫ অক্টোবর শরৎ বোস রোডের ডাকঘর থেকে ৭টি এমন হুমকি ভরা চিঠি পাঠানো হয়। তার মধ্যে একটি চিঠি গিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সোনালি ছাড়াও হুমকি ভরা চিঠি গিয়েছিল এনআরএস-এর অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ জুলি ভট্টাচার্য, ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশন দেবাশিস ভট্টাচার্য প্রমুখের কাছে। বেশ কয়েকটি চিঠিতে প্রেরক হিসেবে যে গৌরহরি মিশ্রের নাম লেখা হয়েছিল, সেই ব্যক্তি অরিন্দমের প্রতিবেশী। এর আগেও একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিতে হুমকি চিঠি পাঠানোর রেকর্ড রয়েছে অরিন্দমের। সেই সূত্রেই পুলিশের নজর পড়েছিল তার দিকে।
সোমবার গভীর রাতে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ প্রথমে বালিগঞ্জের বিজন সেতু এলাকা থেকে টাইপিস্ট বিজয়কে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করতেই পুলিশ জানতে পারে অরিন্দম সেনকে সেই খুনের হুমকির চিঠি টাইপ করে দিয়েছিল। এরপর রাতেই গ্রেফতার করা হয় চিকিৎসক অরিন্দম ও তার গাড়ির চালক রমেশকে। কেননা রমেশই এই দুইজনের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে দিয়েছিল। এই ৩জন মিলেই বিগত ২-৩ বছর ধরে শহরের নানা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে খুন করার হুমকি দিইয়ে চিঠি পাঠাতো। কিন্তু কখনই কোনও মুক্তিপণ বা টাকাপয়সা চাইতো না। তাই পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে এতদিন সরাসরি কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কিন্তু আলাপনবাবুকে খুন করার হুমকি দিয়ে এবার ৩জনই পুলিশের জালে পড়ে গেল।