নিজস্ব প্রতিনিধি: গুচ্ছের নালিশ জমা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই সব নালিশ শুধু বসে যাওয়া নেতারাই ঠুকেছেন তাই নয়, নালিশ করেছেন সক্রিয় নেতারাও। অভিযোগ কার্যত একই। তিনি দলে ব্যক্তিবাদ(Individualism) কায়েম করেছেন। এমন একটা ভান করছেন, এমন আচরণ করছেন, এমনসব কথাবার্তা বলছেন যে দেখে মনে হচ্ছে তিনিই বিজেপি। আর কেউ কিছু না। নিজের ইচ্ছামত কর্মসূচী নিচ্ছেন, ঘোষণা করে দিচ্ছেন, নিজের মনপসন্দ লোক বসিয়ে দিচ্ছেন। দলের আদি নেতারা তো বটেই, সক্রিয় নেতাদেরও বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না। এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখেই এবার নড়েচড়ে বসেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও(Amit Shah) বিপাকে ফেলে দিয়েছেন। দল তাই এবার তাঁর ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)।
আরও পড়ুন হাওড়ায় রেলের Printing Press বন্ধ করে দিচ্ছে মোদি সরকার
আবারও বাংলায় পা রাখতে চলেছেন অমিত শাহ। এই সফরের ফাঁকেই তিনি দলের নেতাদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করতে পারেন। আর সেই বৈঠক থেকেই বার্তা দিতে পারেন যে, ব্যক্তিবাদের ওপর ভর দিয়ে বাংলায় বিজেপি চলবে না। চলতে হবে আদর্শের ওপর ভর দিয়ে। অন্তত বিজেপি সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। আর তা দেখে বঙ্গ বিজেপির অনেক নেতাই মনে করছেন শুভেন্দুর একক ভূমিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে। শুভেন্দু প্রায় নিয়ম মাফিক প্রতিটি সভায় যেভাবে নিজেকে তুলে ধরে মন্তব্য করছেন যে ‘আমি এই করে দেব, ওই করে দেব’, সেই সব মন্তব্যে কোথাও বিজেপি শব্দটাও থাকছে না। তিনি দেখাতে চাইছেন বিজেপি কিছু করছে না, যা করা হচ্ছে তা তিনি একাই করছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির কিছু নেতা শুভেন্দুর এই সব সভায় তাঁর বক্তব্যের ভিডিও পাঠিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। আর তার জেরে শাহের আসন্ন সফরে শুভেন্দুর নাম না নিয়েই বার্তা আসতে পারে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। শুভেন্দুর ‘আমিত্বে’ এবার শিকল পরাতে চাইছেন শাহ। অন্তত তেমনটাই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন বন্ধ হতে পারে বাংলার সাড়ে ৫ লক্ষ প্রবীণের বার্ধক্য ভাতা
শুধু তাই নয়, কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হলেই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে দিল্লিতে ডেকে পাঠাতে চলেছেন দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপির হালহকিকত খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক রদবদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে বাংলা থেকে জেতা বিজেপি সাংসদের একাংশ যে তুলনায় নিরাপদ এবং সুরক্ষিত আসনের খোঁজ করছেন তা কানে গিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কেন এই ধরনের খোঁজ চলছে সেটাই তাঁরা খতিয়ে দেখতে চান। বুঝে নিতে চান, বাংলায় দলের সংগঠন ঠিক কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা সরাসরি বুঝে নিতে চাইছেন তাঁরা। দলের রাজ্য নেতৃত্ব থেকে থেকেই যেভাবে বাংলায় দল নিয়ে বিশাল সব দাবি করেন বা দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠান তা কতটা ঠিক বা বেঠিক সেটা বাজিয়ে নিতে চান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কারণ তাঁদের দাবি, বাংলায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি যদি খুব ভালোই হয়, তাহলে অযথা সুরক্ষিত আসনের খোঁজ চালানো হচ্ছে কেন? বাংলায় দলে দলে মানুষ যদি বিজেপিমুখো হয়ে থাকেন তাহলে রাজ্যের ৩০ হাজার বুথে দলের কোনও সংগঠন এখনও তৈরি করা গেল না কেন? এই সব প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ও বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।