নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। আর এই মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল যখন প্রকাশিত হয় তখনকার মুহূর্তের পরিস্থিতি কারোর অজানা নয়। অনেকে কৃতকার্য হয় আবার কেউ অকৃতকার্য হয়। তবে অকৃতকার্য হওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রমী। তেমনটাই ঘটেছিল প্রায় দু’যুগ আগে আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ি গ্রামে। শেষে ২৩ বছর পর ঘরে ফিরে এলেন পথভোলা পঙ্কজ।
জানা গিয়েছে, প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারেননি পঙ্কজ দেবনাথ। দ্বিতীয়বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েও পাশ করার আশা দেখতে পাননি। অকৃতকার্য হওয়ার ভয়ে ২৩ বছর আগে পালিয়েছিলেন তিনি। চলে গিয়েছিলেন সুদূর দিল্লি। সেখানেই নানা কাজ করেছেন। বাড়ির কথা মনে পড়লেও ফিরতে পারেননি। ভুলেছিলেন মাতৃভাষা, বাড়ির পথ। চেনা বলতে ছিল শুধুই ছেলেবেলার স্কুলের পথ। বাবা-মায়ের কথা মনে আসতেই নিদারুণ কষ্ট পেতেন। তাই সাহস করে প্রায় দুই যুগ পর চলেই এলেন আলিপুরদুয়ার অর্থাৎ বাড়ির পথে। তাঁকে এতদিন পর পেয়ে আপ্লুত বাবা-মা।
পঙ্কজ বলেন, “আমার প্রাথমিক স্কুলের কথা মনে ছিল। টোটো করে সেখানে যাই। টোটোচালক আরও দুটি প্রাথমিক স্কুলের সামনে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে না গিয়ে আমি আমার প্রাথমিক স্কুলের সামনে গিয়ে একজনকে আমার মাসতুতো দাদার কথা বলি। তিনি দাদাকে চেনেন। আমি আমার ফোন নম্বর দাদাকে দিতে বলি। ফিরে এসে আলিপুরদুয়ারের একটি মন্দিরে বসে থাকি। রবিবার দাদা ফোন করলেই আমার সন্ধান পেয়ে যান। ”
পঙ্কজের মাসতুতো দাদা রুপম দেবনাথ বলেন, “ছোটবেলায় আমি আর পঙ্কজ সবসময় একসঙ্গে থাকতাম। ওর নম্বর পাওয়ায় কিছুটা আশ্চর্য হয়ে যাই। ফোন করে জানতে পারি ও ছিন্নমস্তা কালীবাড়িতে আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বসে আছে। আমি একবারে ওকে চিনে যাই। আমাকেও ও চিনতে পারে। ওকে বাড়িতে নিয়ে আসি।”
বাবা পরিতোষ দেবনাথ বলেন, “ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দিত। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। আমাদের ভয়ে ও বাড়ি ছেড়েছিল। তার জন্য একটা দুঃখ আছে। কিন্তু ছেলেকে ফিরে পেয়েছি তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। এখন থেকে ও বাড়িতেই থাকবে।” পঙ্কজকে ফিরে পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেননা বাবা-মা।