নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনের শনিবার মহালয়া। তার কয়েকদিন বাদেই বাংলার বুকে শুরু হয়ে যাবে বাঙালির মহোৎসব দুর্গাপুজো। তারপর একে একে আসবে লক্ষ্মীপুজো, ধনতেরাস, কালিপুজো, ভাইফোঁটা, ছট পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এবং কার্তিক পুজো। অথচ সেই উৎসব মরশুমেই(Festive Season) বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলার(Bengal) ৪৭ হাজার শ্রমিকের বেতন(Salary of 47 Thousand Workers)। নেপথ্যে একটি মামলা এবং সেই মামলায় দেওয়া মধ্যপ্রদেশের(Madhya Pradesh) জব্বলপুর হাইকোর্টের(Jabbalpur High Court) একটি নির্দেশ। বাংলার পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার সরকারি কয়লাখনিগুলিতে এখন প্রায় ৪৭ হাজার কর্মী কাজ করেন Eastern Coalfields Limited বা ECL’র অধীনে। জব্বলপুর হাইকোর্টের নির্দেশে এখন সেই শ্রমিকদেরই বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর তার জেরে চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে এই শ্রমিকদের পরিবার। ধাক্কা খেতে চলেছে এই ৩ জেলার এই বিশাল সংখ্যক পরিবারের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতিও।
দেশের সরকারি কয়লাখনিগুলি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা Coal India’র অধীনে। সেই সংস্থার অধীনেই আবার রয়েছে Eastern Coalfields Limited বা ECL। বেশ কয়েক বছর বাদে Coal India কয়লা খাদানের শ্রমিকদের সংগঠনগুলির সঙ্গে বসে বেতন বৃদ্ধির চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী মোটা টাকা বেতন বাড়ে খনি শ্রমিকদের। সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্দর বর্ধিত বেতন চুক্তি হয় খনি শ্রমিকদের। সেই অনুযায়ী এবার নতুন চুক্তি অনুযায়ী আগের Basic Pay’র থেকে ১৯ শতাংশ হারে বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি করা নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। যার জেরে এক ধাক্কায় অনেকটাই বেতন বাড়ে কয়লা খনির শ্রমিকদের। Coal India’র আওতায় থাকা দেশজুড়ে কর্মরত ২ লক্ষ ২৭ হাজার শ্রমিকের বেতন বেড়েছিল সেই চুক্তি অনুযায়ী। এর মধ্যে বাংলার বুকে কর্মরত ECL’র ৪৭ হাজার শ্রমিকও রয়েছেন। জুলাই মাস থেকে সেই বর্ধিত বেতন পাওয়া শুরু হয়। সেপ্টেম্বর মাসেও বর্ধিত হারেই বেতন পেয়েছেন খনি শ্রমিকরা। কিন্তু ওই মাসেই দায়ের হয় মামলা।
জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে মধ্যপ্রদেশের একাধিক আদালতে মামলা রুজু করে Coal India’র জুনিয়ার আধিকারিকরা। তাঁরা দাবি করেন, শ্রমিকদের বেতন আধিকারিকদের বেতন থেকে বেশি হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ম বিরুদ্ধ। জুনিয়র অফিসাররা পৃথক পৃথক ভাবে ছত্তিসগড়ের বিলাসপুর হাইকোর্ট ও মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর হাইকোর্টে এই অতিরিক্ত বেতনের বিরোধিতা করে মামলা করেন। তাঁদের দাবি ছিল, ২০১৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও সরকারি বা সরকার পোষিত সংস্থার আধিকারিকদের বেতন শ্রমিকদের বেতন থেকে বেশি হবে। কিন্তু এই নতুন বেতন চুক্তির জেরে বহু খনি খনি শ্রমিকের বেতন আধিকারিকদের বেতন থেকে বেশি। যা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সেই মামলায় বিলাসপুর হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ না দিলেও জব্বলপুর হাইকোর্ট বর্ধিত বেতন দেওয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। আর সেই নির্দেশের জেরেই ECL সহ Coal India’র ২ লক্ষ ২৭ হাজার শ্রমিকের বেতন আটকে গিয়েছে। এমনিতে এদের সকলেরই প্রতি মাসের ২ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন হয়ে যায়। কিন্তু এমাসের ১০ তারিখ হয়ে গেলেও বেতন হয়নি। আর তার জেরেই চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে বাংলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার।