নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘোষণা হয়েছিল আগেই। সেই অনুযায়ী নির্মাণের পরিকল্পনার কাজও শুরু করে রাজ্যের পূর্ত দফতর। দফায় দফায় সমীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়ার পর Detailed Project Report বা DPR তৈরিও করা হয়। কথা হয়েছিল কেন্দ্র সরকারই এটি গড়ে দেবে। কিন্তু প্রথমে দিল্লি রাজি হলেও, পরে তারা পিছিয়ে যায়। তারপর রাজ্য নিজেই এই নির্মাণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। নজরে রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার মুড়িগঙ্গার ওপর রেল ও সড়ক সেতু(Muriganga Bridge)। রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার এই সেতুর নির্মাণ নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। প্রায় ৪কিমি লম্বা এই সেতু গড়তে প্রাথমিক ভাবে ২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আগামী অর্থবর্ষেই এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হবে। ২০২৪ সালের রাজ্য বিধানসভায় যে বাজেট অধিবেশন বসবে সেখানেই এই বরাদ্দের ঘোষণা করা হবে রাজ্য সরকারের তরফে। নবান্ন সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একদম শেষপ্রান্তে রয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমার অধীনস্থ সাগর ব্লক(Sagar Block), যাকে অনেকেই সাগরদ্বীপ বলে চেনেন। বাংলা তথা দেশের মূল ভূখন্ড থেকে তা বিচ্ছিন্ন। সম্পূর্ণ দ্বীপ হিসাবে থাকা এই ব্লকের আয়তন ২৮২ বর্গ কিমির সামান্য বেশি। ব্লকে রয়েছে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত যেখানে ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এই ব্লকেই রয়েছে গঙ্গাসাগর(Gangasagar) গ্রাম পঞ্চায়েত যেখানে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির কয়েকদিন আগে থেকেই সাগরমেলা বসে। বাংলা তো বটেই, উত্তর মধ্য ও পশ্চিম ভারত থেকে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় সেই মেলায়। অথচ এই মেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র সরকার কোনওদিন কিছুই করেনি। এ পয়সাও তাঁরা বরাদ্দ করেনি এই মেলার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবছর ধরে বার বার দাবি করেছেন কেন্দ্রের কাছে, এই মেলাকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই দাবি আজও পূর্ণ করেনি কেন্দ্র সরকার। তা সে ইউপিএ জমানায় হোক বা এনডিএ জমানায়।
তবে সাগরদ্বীপের উন্নয়নের জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই ব্লকের প্রায় সব পরিবারকেই আনা হয়েছে রাজ্য সরকারের নানান আর্থ সামাজিক প্রকল্পের অধীনে। সেই সঙ্গে নজর দেওয়া হয়েছে এই ব্লককে বাংলা তথা দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে জুড়ে দিতেও। এখন বছরভর এই ব্লক তথা দ্বীপের মানুষদের মূল ভূখন্ড আসতে হলে ভেসেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু মুড়িগঙ্গায় চর পড়ে যাওয়ায় ভাটার সময় সেই ভেসেল পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন সাগরবাসী। সেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাগরমেলায় আসা পূণ্যার্থীদেরও।
সেই কারণেই রাজ্য সরকার সেখানে প্রায় ৪ কিমি লম্বা সেতু তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই সেতু তৈরি হয়ে গেলে সাগরদ্বীপ জুড়বে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। তখন আর জলপথ নয়, স্থলপথেই পৌঁছে যাওয়া যাবে গঙ্গাসাগর মেলা তথা সাগরদ্বীপে। বদলে যাবে ব্লকের অর্থনীতিও। এই সেতু তৈরির জন্য রাজ্যের অর্থ দফতর এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের সব ফাইল ফের চেয়ে পাঠিয়েছে পূর্ত দফতরে কাছ থেকে। এর আগে সেতু তৈরির খরচ ধরা হয়েছিল ১,৬৪৮ কোটি টাকা। সেটাই বেড়ে এবার ২ হাজার কোটি টাকা হতে চলেছে। নতুন অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ থাকবে এই সেতুর। কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মুড়িগঙ্গার ওপর সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য।