নিজস্ব প্রতিনিধি: নদিয়া জেলার হাঁসখালি(Hanskhali) ধর্ষণ-কাণ্ডে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court)। ওই মামলাটি দায়ের করেছেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। মামলাটির দ্রুত শুনানির জন্য আর্জিও জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে হাঁসখালির ঘটনায় ঠিক কী হয়েছিল সেটা জানতেই এখন দ্রুত তদন্তের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সোমবার সকালেই তাঁরা নির্যাতিতার বাবা ও মাকে বাড়ি থেকে আদালতে নিয়ে গিয়েছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর জন্য। এদিনই তাঁরা রানাঘাট মহকুমা আদালতে(Ranaghat Sub Divisional Court) ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গোপন জবানবন্দি দেবেন। ওই সময় তাঁদের কাছ থেকে মূলত জানতে চাওয়া হবে, এতবড় ঘটনার পরও কেন তাঁরা পুরো বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। তাঁদের কী অভিযুক্তের বাবার তরফে কোনওরকম হুমকি ধমকি দেওয়া হয়েছিল ঘটনা চেপে যেতে, সেটাই জানা চেষ্টা করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার নদিয়া জেলার হাঁসখালি ব্লকের গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর এলাকায় স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য সমর গয়ালির ছেলে ব্রজগোপালের জন্মদিনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্যাতিতাকে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে নির্যাতিতার সঙ্গে ব্রজগোপালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেদিন ব্রজগোপালের জন্মদিনের পার্টিতে কারা কারা উপস্থিত ছিল সেটা খুঁজে দেখার পালা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার দিন পার্টি থেকেই রক্তাক্ত ও ‘অসুস্থ’ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিল নির্যাতিতা। এর পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, ধর্ষণের জেরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। যদিও তড়িঘড়ি করে কোনওরকমের ময়নাতদন্ত ছাড়াই যেভাবে দেহ সৎকার করে ফেলা হয়েছে তাতে তদন্তের কাজে রীতিমত অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশকে(Police)। তাঁরা এটাও বুঝতে পারছেন না ঘটনার দিন ওই নাবালিকাকে(Minor) শুধু ব্রজগোপালই ধর্ষণ করেছিল নাকি তার বন্ধুরাও তাতে যোগ দিয়েছিল। আর তাই নাবালিকার বাবা-মার গোপন জবানবন্দি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে সেদিনের পার্টিতে যারা যারা উপস্থিত ছিল তাঁদের জবানবন্দিও নিতে চাইছে পুলিশ।
তবে সমস্যা হচ্ছে, জন্মদিনের পার্টিতে কার কার ছিল তা খুঁজে বের করা। পুলিশ তদন্তে নেমে ব্রজগোপালের দুই বন্ধুকে আটক করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে ১জনকে এদিন সকালেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আটক করেও ব্রজগপালের যে বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেই যুবক স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ভাগ্নে। যদিও পুলিশের দাবি, জন্মদিনের ওই পার্টিতে বেশিক্ষণ ছিল না সে। তাই মূল ঘটনার বিষয়ে সে কিছু জানে না। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এদিন নির্যাতিতার বাবা-মার পাশাপাশি যে গ্রামীণ ডাক্তার নাবালিকাকে না-দেখেই ওষুধ দিয়েছিলেন তাঁকেও আদালতে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তাঁরও গোপম জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার নাবালিকার দেহ সৎকারকালে যে শ্মশানকর্মী যোগ দিয়েছিলেন ঘটনার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মিলছে না। পুলিশ তাঁর সন্ধান শুরু করেছে। সেই সঙ্গে আর কে কে সেদিন শ্মশানযাত্রী হয়েছিলেন সেই খোঁজও চলছে।
এদিকে এদিন বিজেপির ডাকা বনধে সকালের দিকে আংশিক প্রভাব পড়ে হাঁসখালি ব্লকে। গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় যানবাহনও ছিল কম। কিন্তু বেলা গড়াতেই ছবি বদলায়। একে একে সব দোকানবাজার খোলার পাশাপাশি অটো-বাসও চলাচল করতে শুরু করে। তবে বিজেপি তাঁদের ডাকা ১২ ঘন্টার হাঁসখালি বনধের সমর্থনে ও মূল ঘটনার প্রতিবাদে এদিন মৌন মিছিল বের করে। নেতৃত্ব দেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক আশিস বিশ্বাস। মিছিল থেকে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিও ওঠে।