নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাবেন? করোনাকালে এই চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটছে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির। করোনা সংক্রমণের থাবা বাঁচিয়ে শহরের ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গল থেকে দূরে কোথাও নির্মল ও নিরিবিলি ডেস্টিনেশন খুঁজছেন অনেকেই। যেখানে পুজোর কয়েকটা দিন একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়। তাঁদের বলে রাখি, পর্যটকদের জন্য নতুন রূপে খুলে গিয়েছে মৌসুনি দ্বীপ (Mousuni Island)।
আমরা অনেকেই জানি, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফান ও ইয়াসের জোড়া ফলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রান্তিক পর্যটন কেন্দ্র মৌসুনি দ্বীপের। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল প্রচুর। মাথায় হাত পড়েছিল এই এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের ঐকান্তিক উদ্যোগে ফের নতুন রূপে সেজে উঠেছে সুন্দরবন ও সাগর লাগোয়া এই নির্জন দ্বীপ। তাই এই পুজোয় দুই-এক দিনের জন্য পরিবার নিয়ে কাটিয়ে আসুন প্রকৃতির কোলে নির্জনতাকে উপভোগ করতে মৌসুনি দ্বীপে। কলকাতা থেকে খুব একটা দুরেও নয় এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের (Cyclone YAAS) তাণ্ডবের দগদগে ক্ষত নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল ছোট্ট এই দ্বীপ। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ধাক্কায় এখানকার বহু রিসর্ট ও কটেজের ক্ষতি হয়েছিল। কয়েকটি তো ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। তবে, সেগুলি মেরামত করে ধীরে ধীরে সেজে উঠেছে সুন্দরী মৌসুনি। নামখানা ব্লক প্রশাসন জোরকদমে কাজ করছে, যাতে পুজোর আগেই সম্পূর্ণ সাজিয়ে তোলা যায় মৌসুনি দ্বীপকে। এর জন্য যা যা করার দরকার সবই করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর।
সুন্দরী মৌসুনি…
অনেকেই জানেন না এই মৌসুনি দ্বীপের সঙ্গে অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির ফারাক বিস্তর। কারণ, আজও এই দ্বীপে কোনও কংক্রিটের কাঠামো নেই সেভাবে। হোটেল, রিসর্ট, ক্যাম্প সবই প্রকৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এখানকার কটেজ, মাড হাউস বা ক্যাম্প সবই কাঠ, খড়, দরমার বেড়া, মাটি এবং কাপড় দিয়েই তৈরি। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনই আমাদের মূল মন্ত্র। যদিও বাইরে থেকে বেশ কয়েকটি পর্যটন সংস্থা এখানে রিসর্ট বা হোটেল খুলেছেন, তবে এলাকার মানুষই নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন সেগুলি। তাঁরাই সাজিয়ে তুলেছেন নদীর তীর। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে নানা মাপের টেন্ট এবং মাটির বাড়ি বা MUD House। এগুলিতেই পর্যটকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। যা পরিচালনা করেন এলাকার বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা। ফলে বাইরে বেড়াতে এসেও একটা ঘরোয়া পরিবেশ সবসময় উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
প্রকৃতিকে কাছ থেকে অনুভব করা, মাটির ঘ্রাণ এবং নির্জনতা এই মৌসুনি দ্বীপের ইউএসপি। সর্বক্ষণ এক অপার শান্তি মিলবে এই দ্বীপে। প্রতিটি ক্যাম্প বা মাড হাউস একেবারে নদী বা সাগরের তীরে বালির ওপরে। ফলে গোটা ট্রিপটাই অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ হয় পর্যটকদের কাছে। যেদিন পৌঁছবেন স্নান সেরে নিতে পারেন মুড়ি গঙ্গায়। বিকেলের দিকে নৌকা নিয়ে পৌঁছে যান জম্মু দ্বীপে। সময় নেবে ৩০-৩৫ মিনিট, ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। নৌকায় বসে উপভোগ করতে পারেন বিশাল মুড়িগঙ্গায় বিকেলের সূর্যাস্ত। রাতে বালির চড়ে ক্যাম্প ফায়ার। সবমিলিয়ে দেদার মজা।
মৌসুনি দ্বীপের মূল বৈশিষ্ট্য হল, এখানে যা যা পাওয়া যায় তা দিয়েই চলে পর্যটন ব্যবসা। এখানকার জেলেরা যে মাছ ধরেন সেগুলোই ট্যুরিস্ট ক্যাম্পগুলিতে রান্না করে খাওয়ান জেলে পরিবারের মহিলারা। আবার এখানকার খামারে প্রতিপালিত মুরগি দিয়েই চলে রান্নাবান্না, বার-বি-কিউ বা বন ফায়ার। এখানকার বিভিন্ন রিসর্ট, ক্যাম্পগুলো সাজিয়ে তোলা বা কাজকর্ম সব কিছু করেন এলাকার মহিলারা। ফলে সবকিছুই স্থানীয় উদ্যোগে হয় মৌসুনি দ্বীপে। এখানকার পর্যটন ব্যবসার ওপরেই এখানকার অর্থনীতি নির্ভর করে। তাই পর্যটকদের ভিড়ের ওপরেই তাঁদের রোজগার, জীবনযাপণ। সহজ সরল ওই মানুষগুলোর জন্য একবার ঘুরে আসুন মৌসুনি দ্বীপে।
কিভাবে যাবেন?
শিয়ালদা দক্ষিণ শাখা থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামখানা নামুন। স্টেশন থেকে রিকশাভ্যানে চেপে ফেরিঘাট, ভাড়া ১০-১৫ টাকা। ফেরিতে পার হতে হবে হাতানিয়া-দোতানিয়া নদী, সময় লাগবে ১০ মিনিট মতো। এছাড়া বাগডাঙ্গা ফেরিঘাট, হুজ্জাইত ফেরিঘাট এবং দুর্গাপুর ফেরিঘাট থেকেও নৌকা চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে মৌসুনি দ্বীপে। পাশাপাশি, ধর্মতলা থেকে কাকদ্বীপ ও নামখানা যাওয়ার বাস আছে। তাতেও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে নামখানার দূরত্ব কমবেশি ১০০ কিমি। ফলে গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে সোজা দুর্গাপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন। সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবন্দোবস্ত আছে।