নিজস্ব প্রতিনিধি: আত্মহত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক খুন বলে তুলে ধরে রাজনীতির বাজার বেশ গরম করার পথ নিয়েছিল বিজেপি(BJP)। কিন্তু সেই কৌশলেই কার্যত ঠান্ডা জল ঢেলে দিল মৃত যুবকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। নজরে উত্তর কলকাতার(Kolkata) কাশিপুরে(Kashipur) বিজেপি যুব নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার(Arjun Chowrasia) অস্বাভাবিক মৃত্যু ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যা মঙ্গলবার সকালেই জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court)। আলিপুরের কম্যান্ড হাসপাতালে হওয়া সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এদিন জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেখানেই ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গলায় ফাঁস লেগেই মৃত্যু হয়েছে। মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। শরীরে মেলেনি কোনও আঘাতের চিহ্নও। তবে অর্জুনের পরিবারের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল জানিয়েছেন, আদালত জানিয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবেই ঘটনার তদন্ত হবে। সেই সঙ্গে তিনি ও অর্জুনের পরিবার জানিয়েছে তাঁরা ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই। তাই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।
গত শুক্রবার কাশিপ্রে রেলের একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে মিলেছিল বিজেপির যুব নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ। ঘটনাচক্রে সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ সফরে এসেছিলেন। অর্জুনের এহেন অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সেদিন রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। শাহ নিজেই ছুটে এসেছিলেন কাশীপুরে। কথা বলেছিলেন অর্জুনের পরিবারের সঙ্গে। সেই সঙ্গে দাবি জানিয়েছিলেন সিবিআই তদন্তের। ওই ঘটনার জেরে অর্জুনের পরিবার ও বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, তাঁরা রাজ্য সরকারের পুলিশের ওপর ভরসা করছেন না। ভরসা নেই রাজ্য সরকারের কোনও চিকিতস্ক ও হাসপাতালের ওপর। তাই কলকাতা হাইকোর্ট যেন ঘটনার সিবিআই নির্দেশ দেয় ও কেন্দ্রের অধীনস্থ কোনও হাসপাতালে অর্জুনের দেহের ময়ান্তদন্ত করানো হয়। কলকাতা হাইকোর্টে এই আর্জিতে মামলা দায়েরের পর আদালত নির্দেশ দেয় আলিপুরে থাকা ইস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতালে হবে অর্জুনের দেহের ময়ানাতদন্ত। সেই মোতাবেক শনিবার সেই ময়ানাতদন্ত হয়। সেদিন ইস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতালে অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহের ময়নাতদন্ত হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন কল্যাণী এইমস-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং আরজি কর হাসপাতালের ফরেনসিক সায়েন্স বিভাগের প্রধানও। সেই সঙ্গে করা হয় ভিডিওগ্রাফিও।
কার্যত রবিবারই সামনে এসেছিল অর্জুনের দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। সেখানেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি। তাই আত্মহত্যার সম্ভাবনাই বেশি এই ঘটনায়। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে ইস্টার্ন কম্যান্ড হাসপাতালের তরফে যে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে সেখানে পরিষ্কার জানানো হয়েছে গলায় ফাঁস লাগার জেরেই হয়েছে মৃত্যু। অর্থাৎ তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়নি। ঝোলার আগে পর্যন্ত দেহে প্রাণ ছিল। যদিও অর্জুনের পরিবারের ধারনা, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাই তাঁরা আদালত ও পুলিশের তদন্তের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে থাকছেন। আগামী ১৯ মে পুলিশ তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই রিপোর্ট দেখেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতে মামলা করবেন কী করবেন না।