নিজস্ব প্রতিনিধি: ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই আমরা কোনও পুজোর সময় মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করি। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাঁকেই ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করি। এই প্রতিমা পুজোর সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই সাধারণত গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে, মানুষের দেহ যেমন আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি এই পঞ্চ উপাদান দিয়ে তৈরি। তেমনই দেব-দেবীর প্রতিমার ক্ষেত্রেও তাই। মাটির প্রাণহীন মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সেটি হয়ে ওঠে প্রতিমা। পুজোর পর সেই প্রতিমা পঞ্চতত্ত্বের একটি, সেই জলেই বিসর্জন দেওয়ার রীতি। শাস্ত্রকারেরা বলছেন, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে নিরাকার ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। উপাসনার জন্য সেই নিরাকার ঈশ্বরকে সাকার করতে মাটির প্রতিমায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুজো শেষে পুনরায় ঈশ্বরের সাকার রূপকে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে পুনরায় হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। তাই বিসর্জনের পর আমরা বলে থাকি আবার এসে মা।
বিজয়া দশমী, এই শব্দদুটির মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে বাঙালির আবেগ ও মনখারাপের মিশ্রন। আবার একটি বছরের অপেক্ষা। বাংলার সংস্কৃতিতেই নিমজ্জিত দুর্গা হল ঘরের মে। তাই ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরলে একদিকে যেমন আনন্দ, তাঁর ফেরার সময় তেমনই সবার চোখ ছলছল করে। সেই কারণেই দেবীকে বরণ করা হয় দশমীর দিন। প্রতিটি বারোয়ারী বা বনেদী বাড়িতেই এই রীতি দেখা যায়। মহিলারা দেবী প্রতিমাকে বরণ করে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। যে জন্ম নিয়েছে, তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম। ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তাঁর বিসর্জনও অনিবার্য। বিসর্জনের মাধ্যমেই পুনরায় আগমনের আশা সঞ্চারিত হয়।
এবার আসি বিজয়া দশমীর কথায়। পুরাণমতে মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তাঁর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন দেবী দুর্গা। তাই তাকে ‘বিজয়া’ বলা হয়। দুটি মিলিয়ে বিজয়া দশমী। আবার শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বলা আছে, দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে। পরের শুক্লা দশমীতে তিনি মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। ফলে বিজয়া দশমী কথাটির তাৎপর্য এখানেই লুকিয়ে। অপরদিকে, উত্তর ভারতের বিস্তৃর্ণ এলাকায় দশমীর দিন পালিত হয় দশেরা উৎসব।
‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘দশহর’ থেকে। যার অর্থ দশানন রাবণের বধ বা হরণ। এই দিনেই ভগবান রাম দশানন রাবনকে বধ করেছিলেন। তাই এই দিন দশেরা উৎসব পালন করে প্রতিকী রাবন দহন করা হয়। আবার আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা, ও লক্ষণ। তাঁদের প্রত্যাবর্তণের আনন্দে গোটা অযোধ্যা আলোর মালায় সাজানো হয়েছিল। সেই থেকেই দীপাবলী উৎসবের সূচনা।