ঢাকের উপর ছিল কাঠি
পুজো হল জমজমাটি।
আজ মায়ের ফেরার পালা
দেবী-বরণ ও সিঁদুর খেলা,
জানাই শুভেচ্ছা এই বেলা
শুভ বিজয়া বলার পালা।
নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা সময় ছিল, যখন দশমীর বেলায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পর চলত কোলাকুলির পালা এবং বাড়ি ফিরে বড়দের প্রণাম। বাড়ি বাড়ি ঘুরে মিস্টি খাওয়ার স্মৃতি অনেকেই মনের মনিকোঠায় সযত্নে তুলে রেখেছেন। কিন্তু কালক্রমে এই রীতিনীতি কার্যত অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। যদিও গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার পর থেকেই পুজো হচ্ছে কঠোর সুরক্ষাবিধি মেনে। বিশেষ করে দূরত্ববিধি পালন করা এই করোনা প্রতিরোধের সবথেকে বড় অস্ত্র। তবুও কী পুরোনো রীতিনীতিগুলি আজও পালন করেন আম বাঙালি? উত্তর হল ‘না’। এখন সবকিছুই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে চলে। অর্থাৎ সামাজিক মাধ্যমে স্টিকার পাঠিয়ে কোলাকুলি থেকে মিষ্টিমুখ! সবই মায়া।
আসলে আজকাল দিনে মানুষের হাতে সময় বড্ড কম। ব্যস্ত জীবনে তাই অন্যদের জন্য সময় দেওয়ার ফুরসত কই? ফলে ধীরে ধীরে সেই পুরোনো রীতিগুলিতে ভাঁটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক দশক আগেও শহর কলকাতায় বা শহরতলির অলিগলিতে দেখা যেত দশমীর সন্ধ্যায় ও রাতে ছেলে-মেয়েরা পাড়ায় ঘুরে ঘুরে মিস্টি খেতে। বড়দের প্রণাম করে আশির্বাদ নেওয়া আর সমবয়সীদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেও দেখা যেত। বাংলার পল্লীগ্রামে আজও এই রীতি চোখে পড়বে। কিন্তু শহরাঞ্চলে বিজয়ার কোলাকুলি আর চোখেই পড়ে না। বদলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা ইনস্টাগ্রামে শুক্রবার সকাল থেকেই চলছে শুভেচ্ছা জানানোর পালা। যদিও আসল রীতি হল পাড়ার প্রতিমা বিসর্জনের পরই বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো। তবে সে কথা মানে ক’জন? যে যত আগে শুভেচ্ছা জানাতে পারে যেন তারই প্রতিযোগীতা চলছে। এমনকি অনেকেই নবমীর মধ্যরাত্রি থেকেই শুভ বিজয়া লেখা বিভিন্ন বার্তা বা স্টিকার পাঠাতে শুরু করেছেন। ঢাকের তাল, সিঁদুর খেলা, দেবীর বরণের পর গঙ্গা বা স্থানীয় জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টি মুখ আর একরাশ নতুন আশা নিয়ে শুরু হয় বাঙালির বিজয়া পর্ব। কিন্তু এখন সবকিছুই যেন ছাড়া ছাড়া। ভার্চুয়াল জগতেই চলে শুভেচ্ছা জানানোর পালা। মিষ্টি হাতে আর কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যায় না বিজয়া করতে। বরং সামাজিক মাধ্যমে ‘শুভ বিজয়া’ লিখে একটা ছোট্ট মেসেজ বা স্টিকার পাঠিয়েই দায় সারছে নবীন প্রজন্ম।