নিজস্ব প্রতিনিধি, নড়াইল: ধর্ম আবমাননার মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে জুতো মালা পরানোর বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ‘আমি স্বপন বিশ্বাস’ (I Am Swapan Kumar Biswas) বলে এক আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম হোসেন হাবিব (Golam Hossain Habib)। অথচ যাঁর অপমানে ক্ষুব্ধ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ, সেই নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের (Mirzapur United Degree College) অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস (Swapan Biswas) প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে মৌলবাদীদের হাত থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যে দুই বার ঠিকানা বদলেছেন। সোমবার এক গোপন ডেরায় বসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়েও তাঁর চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল এক অজানা আতঙ্ক।
গত ৩০ বছর শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত স্বপন বিশ্বাস (Swapan Biswas)। দেশ গড়ার কারিগরদের তৈরি করেছেন। বরাবরই ছাত্র অন্তঃপ্রাণ। অথচ সেই প্রিয় ছাত্ররাই যে এইভাবে প্রতিদান ফেরাবেন, ভাবতেও পারেনি। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে যে কলেজে শিক্ষকতা করেছি, সেই কলেজের পড়ুয়া ও অভিভাবকরা শুধু মাত্র গুজবের বশবর্তী হয়ে গলায় জুতোর মালা পরাবেন, তা ভাবতেও পারিনি। কলেজে গেলে নতুন করে আবার হামলা হয় কি না, সেই আশঙ্কায় রয়েছি। তারপরেও কলেজে ফিরতে চাই। কারণ আমার পরিবার আছে, সন্তান আছে, তাদের ভরণ-পোষণের খরচ আমাকে বহন করতে হয়। কলেজের চাকরিই আমার আয়ের উৎস।’
নিন্দার ঝড় ওঠার পরেই নড়াইলের পুলিশ সুপার (Narail Police Super) প্রবীর রায় (Prabir Roy) থেকে শুরু করে জেলাশাসক (District Collector) হাবিবুর রহমান (Habibur Rahaman), স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংসদ কবিরুল হকরা (Kabirul Haque) নির্লজ্জের মতো বলে চলেছেন, ‘অধ্যক্ষকে জুতোর মালা পরানোর ঘটনাটি দেখিনি।’ অথচ এদিন ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে স্বপনবাবু (Swapan Biswas) দাবি করেছেন, কয়েক শো পুলিশের সামনে জুতোর মালা পরানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘পুলিশ যখন আমাকে কলেজ থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই স্থানীয়রা জুতোর মালা পরায়। পুলিশের কেউ বাধা দেয়নি। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচতে একটি হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ হেলমেট দেয়নি। বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেওয়ার পরেও খুলে নিয়ে যায়। পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার সময় পিছন থেকে মারা হয়। মাটিতে পড়ে যাই। তখন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়।’
শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরের দিন পুলিশ ছেড়ে দেয় স্বপনবাবুকে। থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কলেজেরই এক শিক্ষকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে হামলার ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই তিনি।