নিজস্ব প্রতিনিধি: সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’র ভাবনার বীজ বপন হয়েছিল যেই মন্দির থেকে সেই মন্দির প্রায় দেড় দশক ধরে পড়ে রয়েছে মূর্তিহীন অবস্থায়। সর্বত্র যখন মা কালীর আরাধনার প্রস্তুত, তখন এবছরও মূর্তিহীন দরিয়াপুরের কপালকুণ্ডলা মন্দির। নেই কোন কষ্টি পাথরের পুরনো মূর্তিও। কপালকুণ্ডলার কালীমন্দিরটি রয়েছে কাঁথি ২ দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুরে।
১৮৬০ সালে বঙ্কিমচন্দ্র কাঁথি মহকুমার ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে ১০ মাসের চাকরি জীবনে এখানেই কাটানোর সময় ‘কপালকুণ্ডলা’ লেখেন। রসুলপুর নদীর তীরে সেই বিখ্যাত কালীমন্দির ও বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত বাংলো, নাট্যমঞ্চ, বিভিন্ন ফলক ও নিদর্শন আজও রয়েছে। বঙ্কিমের উপন্যাসে এই মন্দিরেই হয় নবকুমার-কপালকুণ্ডলার প্রেম।
প্রায় ১০০ বছর আগে কপালকুণ্ডলা নামে এক নারীর হাত কেটে বলি দিচ্ছিলেন এক কাপালিক। সে সময় তাঁকে উদ্ধার করেন নবকুমার এক যুবক। তারপর থেকেই কপালকুণ্ডলা মন্দিরে কালীপুজোর প্রচলন। এমনই জনশ্রুতি রয়েছে দরিয়াপুরে। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরের সংস্কারের জন্য ২০১৩ সালে উদ্যোগী হয় সরকার। ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই বছরই সংস্কারের কাজ শেষ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। একেবারে নতুন রূপে সেজে ওঠে কপালকুণ্ডলা মন্দির। কিন্তু মন্দিরের ভেতরে সেই সময় থেকেই কোনও কালী মূর্তি বসানো হয়নি। এদিকে, সংস্কারের কয়েক বছর পরই ফের মন্দির বেহাল হয়েছে। ছাদ থেকে চুঁইয়ে জল পড়ে। দেওয়ালের প্লাস্টারও খসে পড়ে কিছু কিছু অংশে।
এ বছরও কালীপুজোর দিন মূর্তিহীন অবস্থাতেই কপালকুণ্ডলা মন্দির। যা নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কপালকুণ্ডলার মূল মন্দির থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সম্প্রতি একটি নতুন কালি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই কয়েক বছর ধরে কালী মায়ের পুজো করা হয়।
সেই ইতিহাসের পটভূমিকে ধরে রাখতে ২০০৬ সালে মন্দিরটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। কমিশন ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ ৪০ লক্ষ টাকায় মন্দিরটি সংস্কার করে ২০১৩ সালে।
বহু গবেষক, পর্যটক, বিশেষত কালীপুজোর সময় এখানে আসেন। মন্দিরের কেয়ারটেকার ভূদেব জানা বলেন, ‘পর্যটকেরা সকলেই কপালকুণ্ডলা কালীমূর্তি কেমন ছিলেন, তা জানতে কৌতূহল দেখান।’ কিন্তু আসল মন্দির মূর্তি হীন হয়েই রয়ে গিয়েছে।