এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

পুজোর ভ্রমণ: পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম

নিজস্ব প্রতিনিধি: আজকের প্রজন্মের কাছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ও ট্যুরিজম খুবই জনপ্রিয়। অনেকেই বাইক বা ব্যক্তিগত গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে কাছে-দূরে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন কাজের চাপ কাটানোর জন্য। আবার অনেকেই অ্যাডভেঞ্চারের আশায় কোনও পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে যান প্রতি বছর নিয়ম করে। ঘরের কাছেই এমনই এক অনবদ্য অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের বন্দোবস্ত রয়েছে তার কথাই আজ আপনাদের জানাবো।

আমাদের রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে পুরুলিয়া। জঙ্গলমহলের অন্তর্গত পুরুলিয়ায় এমনও জায়গা রয়েছে যেখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় পাথরের বোল্ডার। আর তারই মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে চারটি অনুচ্চ পাহাড়। সবুজের ক্যানভাসে ধুসর এই পাহাড়গুলি শীতের পুরুলিয়ার মুখ্য আকর্ষণ। আমি বলছি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ের কথা। স্থানীয় মানুষদের কাছে চারটি পাহাড়ের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। যেমন, জয়চণ্ডী, যোগীঢাল, ঘোরী ও সিজনী। প্রত্যেকেরই উচ্চতা ২০০ থেকে ২৬০ মিটারের মধ্যে। তবে অনেকেই ঘোরীকে সীতাপাহাড় ও সিজনীকে কালীপাহাড় বলেও ডাকেন। সবমিলিয়ে শীতের ছোট্ট একটা ট্যুরের জন্য আদর্শ জায়গা এই জয়চণ্ডী পাহাড়।

অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ও ট্যুরিজম, এই দুই ক্ষেত্রের জন্যই পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড় আদর্শ। কারণ এর জন্য এখানে পেয়ে যাবেন প্রচুর রসদ। ব্যাপারটা খুলেই বলা যাক, জয়চন্ডী পাহাড়ে রক ক্লাইম্বিং শেখার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি নেচার স্টাডি ক্যাম্পে যোগ দিয়েও ভরপুর রোমাঞ্চ অনুভব করা যায়। কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরেও নয়। তাই বাইকাররা অনেকেই চলে আসেন এই পথে। পাথুরে পথে বাইক চালিয়ে পাহাড়ের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যায় আর কি।

পুরুলিয়া জেলার জয়চণ্ডী পাহাড়কে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই তৈরি হয়েছে প্রচুর সুযোগ সুবিধা। যদিও বহু আগে থেকেই পর্বতারোহন সংস্থাগুলি এখানে ক্যাম্প চালিয়ে আসছেন। এই জয়চণ্ডী পাহাড়েই বহু পর্বতারোহীর হাতেখড়ি হয়েছে। তবে বর্তমানে এখানে সাধারণ পর্যটনের মান অনেকটাই বেড়েছে। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা হিরক রাজার দেশের শুটিং এই জয়চণ্ডী পাহাড়েই হয়েছিল। এরপর থেকেই এই এলাকা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে। নস্টালজিক বাঙালি মনে আজও এই পাহাড়ে গেলে চোখের সামনে দেখতে পান গুপি-বাঘার সঙ্গে উদয়ন পণ্ডিতের দেখা হওয়ার দৃশ্য। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর থেকে মাত্র তিন কিমি দুরে এই জয়চণ্ডী পাহাড়। অপার নির্জনতা ও সবুজের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়ানো কয়েকটি ছোট পাহাড়। নীচেই রয়েছে এক শান্ত গ্রাম, নাম তার নন্দুয়ারা। সব মিলিয়ে জয়চণ্ডী পাহাড় বহুকাল আগেই বাঙালির মননে জায়গা করে নিয়েছে।

ধু ধু প্রান্তরের মাঝে কয়েকটি খাঁড়া ও ন্যাড়া পাহাড় যেন [প্রকৃতির অপার বিস্ময় হয়েই রয়ে গিয়েছে। প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে ভিড় করেন উঠতি পর্বতারোহীরা। বহু পর্বতারোহণ সংস্থা এখানে ক্যাম্প করে চালায় শৈলারোহণ ও প্রকৃতি বিক্ষণ শিবির। তা বলে সাধারণ পর্যটকদের জন্য যে কিছুই নেই সেটা ঠিক নয়। আগেই বলেছি কয়েকটি বড় পাহারের সমস্টি হল জয়চণ্ডী পাহাড়। মূল চারটি পাহাড় হল যোগীঢাল, জয়চণ্ডী, ঘোরী ও সিজনী। তবে সাধারণ পর্যটকদের কাছেও এই এলাকা অপার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে। যোগীঢাল একেবারেই ন্যাড়া, রুক্ষ ও গাছপালাহীন। এই পাহাড়ের চুড়াটি দেখলে মনে হবে যেন কোনও মন্ত্রবলে বর্শার ফলা মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, বহু যুগ আগে এই এলাকার শাসক পঞ্চকোট রাজারা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এই যোগীঢালের উপর থেকে হাত-পা বেঁধে নীচে ফেলে দিতেন। বর্তমানে এই পাহাড়েই রক ক্লাইম্বারদের স্বর্গরাজ্য। যোগিঢালের উপর রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি ওয়াচ টাওয়ার। ১৮৩১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দূরে খবর পাঠানোর জন্য এই স্তম্ভ বানিয়েছিল। এখন এটিই ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে দূরের গ্রামগুলি দেখতে দারুণ লাগে।

এছাড়া রয়েছে ৪০০ বছরের পুরোনো চণ্ডীমন্দির। পলাশ, শাল,মহুয়ার ঘেরা লালমাটির শহর পুরুলিয়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জয়চণ্ডী পাহাড়। প্রায় ৮০০ ফুট উঁচু জয়চন্ডী পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে মা চণ্ডীর নামানুসারে। কথিত আছে, প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই মন্দির। কিন্তু মূল মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নতুন করে এটি বানানো হয়েছে। তবুও স্থানীয় মানুষদের কাছে যথেষ্টই জাগ্রত। নিত্যপুজো হয় এখনও। এই পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে শ্রী শ্রী চণ্ডীর মন্দিরটি। মন্দির দেখতে হলে আপনাকে প্রায় ৫২০ ধাপ সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হবে। তবে একটু কষ্ট করে মন্দির চত্বরে পৌঁছতে পারলেই এক লহমায় কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে। কারণ সেখান থেকে নিচের দৃশ্য এক কোথায় অসাধারণ। একদিকে সাঁওতালডিহি আরেকদিকে পঞ্চকোট পাহাড়। কিছু দূরে দেখা যায় জয়চণ্ডী পাহাড় রেলস্টেশন। দূর থেকে আসা ট্রেন সরিসৃপের মতো এঁকেবেঁকে এগিয়ে আসতে দেখে মনে হতেই পারে যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্র।

কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

জয়চণ্ডী পাহাড় যাওয়ার জন্য ট্রেন ও বাস দুটি রুটই রয়েছে। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার যেকোনও ট্রেনে আদ্রা স্টেশনে নামতে হবে। আবার ট্রেনে আসানসোল গিয়ে সেখান থেকে আদ্রাগামী ঘন্টা পাঁচেক। থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইউথ হোস্টেল রয়েছে। ইন্টারনেটে ঘর বুক করা যায়। ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট। এছাড়াও পুরুলিয়া জেলার ওয়েবসাইট http://purulia.nic.in/ গিয়ে হোটেল, রিসর্ট ও নেচার ক্যাম্পগলির খোঁজ পাবেন। প্রয়োজনে বুকিং করতে পারবেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পুজোয় কাছেপিঠে ঘুরতে যেতে চান, তালিকায় রাখুন এই তিনটি জায়গা

পুজোতে ঘুরতে যেতে চান, পরিকল্পনা কী করে ফেলেছেন, রইল কিছু ভ্রমণ তালিকা

কোথাও ‘ভিলেন’ রাবণকে পোড়ানো হয়, আবার কোথাও হয় ‘হিরো’ দশাননের পুজো

পুজোর ছুটিতে বাড়িতে থাকতে চান না! তাহলে ঘুরে আসুন বনলক্ষী, ঝিলিমিলি, কাঁকসার গড় জঙ্গল থেকে

দেবী দুর্গার আরাধনা করেন মুসলিম পুরোহিত

পুজোর ছুটিতে দূরে যেতে চান না, তাহলে ঘুরে আসুন বাংলার এই ৫ টি ডেস্টিনেশন থেকে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর