এই মুহূর্তে




রাজপ্রাসাদ থেকে সমুদ্র, পুজো কাটুক রাজকীয় মেজাজে

নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজো প্রায় দোড়গোড়ায়। এই সময় টিকিট পাওয়া খুব মুশকিল। অনেকেই আছেন যারা এই পুজোর সময়টায় ঠিক ভিড়ভাট্টা বা কোলাহলের মধ্যে কাটাতে চান না। তাদের জন্য আজ এক নতুন ঠিকানার সন্ধান দেব আমরা। দূরত্ব কলকাতা থেকে মাত্র ১৭৫ কিলোমিটার। নাম পাঞ্চেতগড়। এই স্থানের নাম অনেকেই জানেন, তবে যান না সবাই। আপনি বরং এই পুজোয় ঘুরে আসুন এখান থেকে।

পাঞ্চেতগড় যেতে হয় কলকাতা থেকে কাঁথি হয়ে। বাংলায় অবস্থিত, অথচ বাংলারই বহু মানুষ জানেন না এই বিষয়ে। সম্রাট ঔরঙ্গজেব  থেকে সঙ্গীতজ্ঞ যদুভট্টের নাম জড়িয়ে রয়েছে এখানকার রাজপরিবার। নিজের বাংলার ইতিহাসকে যদি জানতে হয় তাহলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসতে হবে পাঞ্চেতগড়ে।

পাঞ্চেতগড় আদপে একটি গ্রাম। পুকুর, জমজমাট বাজার পেরিয়ে চোখে পড়বে মন্দিরের চূড়া লাগোয়া রাজমহল। তারপর সুবিশাল মাঠ। তা পেরোলেই আবার পঞ্চেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দির বাংলার আর পাঁচা দেবালয়ের আকারে তৈরি নয় কিন্তু। বরং এর নির্মাণ হয়েছে দক্ষিণী রীতি মেনে। মন্দির চত্বরেই রয়েছে নারায়ণ জীউর মন্দির। আজও এখানে পূজিত তিনি। বাংলার সবচেয়ে বড় কষ্টিপাথরে গড়া এই মূর্তি। এরপর সিংহদুয়ার পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে রাজমহলের অন্দরে। এর মধ্যেই রয়েছে আটচালার মন্দির, যদুভট্টের সঙ্গীতশিক্ষা মহল। পর্যটকরা যাতে বারবার আসেন তার জন্য রয়েছে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। দুপুরের খাবারও পেয়ে যাবেন দিনের দিন গিয়ে চলে আসতে চাইলে।

পাঞ্চেতগড় রাজপরিবারের ইতিহাস বহু প্রাচীন। সপ্তদশ শতকে সম্ভবত ১৭৭৯ সালে ওড়িশার পুরীর আটগড়ে বাস ছিল কালামুরারী মুরারিমোহন দাস মহাপাত্রর। সেতারের হাত চভহিল তাঁর অপূর্ব। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে বসে তিনি তাই সেতার বাজাতেন। একদা রাজা শুনতে পান সেতারের শব্দ। এমন মধুর টানে মুগ্ধ হন তিনি। তারপর কালামুরারী মুরারিমোহন দাস মহাপাত্রের ওপর দায়িত্ব পড়ে তুলসী সেবার। রাজা আবার কালামুরারীকে মন্দির সংলগ্ন ৩ বিঘা জমি দান করেন। সেখানে বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে কালামুরারী চলে যান তাম্রলিপ্ত বন্দরে। এই তাম্রলিপ্তই বর্তমান সময়ের তমলুক। বন্দরের কাজ কর্ম সামলাতেন মুরারী। তাঁর কাজে খুশি হয়ে পরে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পটাশপুর পরগনার জমিদারির দায়িত্বভার অর্পণ করেন।

প্রথমে শৈব থাকলেও পরে মহাপাত্র পরিবার গ্রহণ করেন বৈষ্ণব ধর্ম। এমনও শোনা যায় শ্রীচৈতন্য নীলাচল যাওয়ার সময় পটাশপুর পরগনায় এসেছিলেন। সেই সময় তিনি সবাই ভাসিয়ে যান কৃষ্ণপ্রেমের জোয়ারে। সেই থেকেই ক্ষত্রিয় শৈব উপাসকদের বৈষব ধর্মে রূপান্তর। আরও পরে পাঞ্চেতগড়ের জমিদারেরা দাস মহাপাত্র পদবি পান। সেই শুরু, আজও এখানে মহাসমারোহে পালিত হয় রাস। রাধাকৃষ্ণের ঝুলন, নন্দ উৎসব, শিবরাত্রি, দোলযাত্রা, রামনবমী, শীতলা স্বয়ং বার মাসে তেরো পার্বণ এখানে। আজও প্রতিটি মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। এ বাড়িতে পটচিত্রে পূজিত হন দেবী দুর্গা। তাই আসন্ন পুজো উপলক্ষেও এখানে সাজো সাজো রব।

এখানে দেখার জায়গা প্রচুর। রাজবাড়ি তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে বেলাভূমি। রাজবাড়ি থেকে ২২ কিমি দূরে জুনপুট। বিস্তীর্ণ জলরাশি দেখে মুগ্ধ হওয়া ও আরও একবার ইত্যিহাসকে ফিরে দেখার পালা। এখানে চিতাভষ্ম বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। তাই জুনপুটের সমুদ্রতট স্নানের উপযোগী নয়। জুনপুট থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে এক নতুন সাগরপাড় হরিপুর। জুনপুট থেকে ৫ কিমি দূরে রয়েছে আর এক নির্জন সমুদ্রতট, নাম বাঁকিপুট।

পাঞ্চেতগড়ের কাছাকাছিই অবস্থিত সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলার পটভূমি দরিয়াপুর। সেই জঙ্গলের দেখা যদিও আর পাবেন না। কপালকুন্ডলার মন্দিরও আমূল সংস্কার করা হয়েছে। হলদে রঙের নবনির্মিত মন্দিরে পূজিত হন প্রাচীন মূর্তি। এছাড়া দরিয়াপুরের লাইটহাউজও দেখার মতো জায়গা। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। হাওড়া থেকে ট্রেনে বা ধর্মতলা বাসে কাঁথি নামুন। সেখান থেকে চলে আসুন এগরা। এখান থেকে গাড়ি করে চলে যান পাঞ্চেতগড়। আবার ধর্মতলা এগরাগামী বাসে এগরা নেমে টোটোতেও পাঞ্চেতগড় পৌঁছতে হয়।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

দেশীয় আনারকলিতে ‘মিস ইউনিভার্স’ মঞ্চের শোভা বাড়ালেন ভারতীয় প্রতিযোগী মণিকা বিশ্বকর্মা

এগরায় জমি বিবাদ ঘিরে সংঘর্ষ, দু’পক্ষের বাড়িতে আগুন

মানতে পারেননি ছেলের মৃত্যুশোক, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী মা

চন্দ্রকোণাতে ৬৯ হাজার টাকার খুচরো পয়সা দিয়ে নতুন স্কুটি কিনলেন চা বিক্রেতা, গুনতে সময় লাগলো ২ ঘণ্টা

এক রাতে ইউক্রেনে ৫০৩ বার হামলা চালাল রাশিয়া

শীতের শুরুতেই বাঘ মামার দর্শন, ডাঙায় দেখা মিলল কুমিরের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ