নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘তুমি রবে নীরবে’, ছিল তাঁর প্রথম শ্রদ্ধার্ঘ্য। মঙ্গলবার দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ের মুখ দেখে সেই জয়কে তিনি উৎসর্গ করলেন তাঁকেই যিনি তাঁর হৃদয়জুড়ে নীরবেই রয়ে গিয়েছেন। নজরে কলকাতা পুরনিগমের ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড। সেখান থেকেই এবারে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুদর্শনা মুখার্জী। আর সেই জয় তিনি উৎসর্গ করলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। জয়ের পরে তিনি জানালেন, ‘আমার জয় আমি সুব্রতদাকেই উৎসর্গ করলাম। এটা আমার গুরুদক্ষিণা। আমি তো সেটা দেওয়ার সময় পাইনি। তার আগেই অকালেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন তিনি। তাই আমার এই জয় তাঁর কাছে আমার গুরুদক্ষিণা। মানুষকেও ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য।’
এবারে কলকাতার পুরনির্বাচনে প্রথম থেকেই ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিল। কেননা এখানে তৃণমূলের তরফে ২০১৫ সালে জয়ী হয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সুযোগ্য শিষ্যা সুদর্শনা মুখার্জী। কিন্তু এবারে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় দেখা যায় ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তারপরেও লুকিয়ে ছিল চমক। তনিমার নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হলেও পরে সেখান থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয় সেই সুদর্শনাকেই। আর তার জেরেই ওই ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হন তনিমা। কিন্তু এদিন ভোটগণনার শুরু থেকেই লিড তুলতে শুরু করেন সুদর্শনা। শেষে দেড় হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে শেষ হাসি হাসলেন সুব্রত শিষ্যা। আর সেই জয় তিনি উৎসর্গ করলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেই।
তবে এই জয়ের পিছনে এলাকার বয়স্ক মানুষদের একটা বড় ভূমিকা থেকে গেল। কেননা সুদর্শনাকে জেতাতে তাঁরাই বিশেষ করে প্রবীণ মহিলারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে প্রচার শুরু করেছিলেন। কলকাতার বুকে সাম্প্রতিককালে এই প্রথম একজন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সমর্থনে একটি অরাজনৈতিক মিছিলের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। শ্লোগানহীন, রাজনৈতিক দলের পতাকাহীন, রাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুনহীন সেই মিছিলে বেজেছিল শুধুই রবীন্দ্রসঙ্গীত। গোটা কলকাতার নজর টেনেছিল সেই প্রচার, সেই সমর্থন। প্রাক্তন সাংবাদিক সুদর্শনাকে রাজনীতির ময়দানে টেনে এনেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই। কার্যত তাঁকে নিজে হাতে রাজনীতির জন্য তৈরিও করেছিলেন তিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই সুদর্শনার এই দ্বিতীয় জয় তিনি নিজে আর দেখে যেতে পারলেন না। তবে সুদর্শনা জানিয়েছেন তাঁর এই জয় তিনি গুরুদক্ষিণা হিসাবেই উৎসর্গ করছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।