নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মহানায়ক উত্তমকুমার। তাঁর কোনও বিকল্প হয়তো এই প্রজন্মে আর আসবে না। টলিউডের প্রাণ ভ্রমরা। যুগ যুগ ধরে তাঁর নামটা বাঙালীর স্মৃতিতে আটকে থাকবে। বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করার সাধ্য কারুর নেই। আজ নায়কের ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর হাসি, ঢেউ খেলানো চুল, সিগারেট খাওয়ার স্টাইল, উজ্জ্বল বর্ণ, অভিনয়ের মাপকাঠি, এগুলো কোনও বিচার্য নয়। তাঁর অভিনয় আজও মানুষের মনে অমলিন। যার বিকল্প কখনই তৈরি হবে না এবং তৈরি হওয়ার নয়। তাঁর নামে বাংলার বুকে রয়েছে খোদ একটি মেট্রো স্টেশন। মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা গেলেও বিশেষ সম্মান পাননি তিনি। মহা নায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তাঁর কেমিস্ট্রি আজও বাঙালিদের স্মৃতিতে ঠাসা।
তাঁরা একসঙ্গে প্রায় ৫০-৬০ টি সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে। উত্তমকুমার-এর আজও বহু রমণীর ঘুম কেড়ে নেয়। ‘ওগো বন্ধু সুন্দরী’ চলচ্চিত্রের শুটিং চলাকালীনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮০ দশকে ২৪ জুলাই মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন, নিজেকে একেবারে ঘরবন্দী করে ফেলেন। কিন্তু কেন তিনি আর বাইরে বেরোননি, আজও তা রহস্য। এত বড় অভিনেতা হয়েও তাঁর পারিশ্রমিক কত ছিল একেকটা চলচ্চিত্র পিছু, তা জানা আছে কী?
বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন এক হীরের টুকরো, যার দিকে তাকালে চোখ ফেরানো দায়। তবে জানা যায়, তিনি কলকাতার পোট্রাস্টে কাজ করতেন। কিন্তু ওই ১০-৫ টার ডিউটি কখনই শিল্পীকে আটকে রাখতে পারেনা। যদিও বর্তমান সময়ের তুলনায় সেই সময় শিল্পীদের পারিশ্রমিক খুবই কম ছিল। এখন ছবির ধরণ যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনই শ্যুটিং এর ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন হয়েছে। তাই ছবির বাজেট থেকে শুরু করে অভিনেতাদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। সেই সময়ে মহানায়কের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। যেকোনো মূল্যে পরিচালক-প্রযোজকরা তাঁকে সিনেমায় নিতে চাইতেন।
তবে অভিনয়ের শুরুতে তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি অসফল হলেও পরবর্তীতে তাঁর সবকটি ছবি হিট হয়েছিল। সিনেমার ম্যাটিনি আইডল ছিলেন তিনি।বর্তমানে সিনেমার তারকারা ছবি পিছু কোটির নিচে পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো কথাই বলেন না। শোনা যায়, উত্তমকুমার ছবি পিছু আড়াই-তিন লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন। যা ছিল কোটি টাকার সমতুল্য। তবে উত্তমকুমারকে দিয়ে ছবি করানোর জন্য যেকোনও পরিচালক-প্রযোজকরা তাঁকে দিয়ে ছবি করাতে চাইতেন। যদিও এও শোনা যায় যে, মাত্র সাড়ে ১৩ টাকা ছিল তাঁর প্রথম পারিশ্রমিক।
১৯৪৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দৃষ্টিদান’ ছবির মাধ্যমে তিনি শিশুশিল্পী হয়ে অভিনয়ে ডেবিউ করেছিলেন। তখনই তাঁর পারিশ্রমিক ছিল মাত্র সাড়ে ১৩ টাকা। সেই বছরই তিনি নায়কের ভূমিকায় নবেন্দুসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত কামনা ছবিতে অভিনয়ের জন্যে মাত্র দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। এর কিছু বছর পরই তিনি নিজের নাম বদলে অরুণ কুমার থেকে উত্তম কুমার হয়ে সাড়ে চুয়াত্তর-এর মাধ্যমে অভিনয়ের মূল স্রোতে ভেসে যান। তখন তাঁর পারিশ্রমিক ছিল আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে সেই টাকার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা।