নিজস্ব প্রতিনিধি: আদিপুরুষ’ নির্মাতাদের এবার চরম তুলোধনা করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। মুক্তির আগে থেকেই তেলেগু ছবি ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে ঝামেলা অব্যাহত। গোটা বিশ্বে মোট ১৫০ টি প্রেক্ষাগৃহে এবং পাঁচটি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। কিন্ত ছবি মুক্তির আগে থেকেই ছবি ঘিরে বিতর্কে জেরবার। আর ছবি রিলিজ হতেই বিতর্ক চরমে ওঠে। হিন্দুধর্মের পৌরাণিক ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’-এর আধুনিক সংস্করণ আদিপুরুষ। ছবির সংলাপ, ভগবান রামের ভূমিকায় প্রভাসের কন্ঠে ভুলভাল সংলাপ, সীতার বেশে কৃতি শ্যাননের পরণে ওয়েস্টার্ন পোশাক, হনুমানের চরিত্রের আপত্তিকর সংলাপ, সবটা নিয়েই দেশে রীতিমতো তাণ্ডব চলছে। হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত এনেছে ছবি, সঙ্গে হিন্দু ধর্মের ভগবানের মুখে এই ধরণের সংলাপ শোনাও পাপ বলে দাবি দর্শক দের। চিত্রনাট্যকার মনোজ মুনতাশির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ফাঁদে পড়ে নির্মাতারা সংলাপ বদলালেও বিতর্ক থামার নাম নেই।
আদালত হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের উপর ভিত্তি করে একটি পৌরাণিক অ্যাকশন ফিল্ম বলে দাবি করা ‘আদিপুরুষ’-কে নিষিদ্ধ করার দাবিতে একটি আবেদনের শুনানি করেছে ২৭ জুন। অবিলম্বে ছবির প্রদর্শনী বন্ধের ডাক দিয়েছে গোটা দেশ। গতকাল থেকেই এলাহাবাদ হাইকোর্টে ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে তুলকালাম চলছে। আজ হয়ে গেল শুনানি। শুনানিতে ‘আদিপুরুষ’ নির্মাতাদের সংলাপের জন্য দর্শকদের একটি বড় অংশকে ক্ষুব্ধ করা এবং ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার অভিযোগে লেখক মনোজ মুনতাশিরকে আদালতে পেশ হতে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে, আদালত তাঁর বিরুদ্ধে যে নোটিশ জারি করেছে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর কলমের খোঁচাতেই উঠে এসেছিল এই ধরনের আপত্তিকর সংলাপ, যা নিয়ে রুদ্ধ গোটা দেশ।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেন্সর বোর্ডের উপরেও প্রশ্ন তুলেছে। সেন্সর বোর্ড কী করে এই ছবিটি রিলিজের অনুমতি দিল? হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ বলেছে, “আমরা কি এখনও চুপ করে থাকব, চোখ বন্ধ করে রাখব, ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা কতদিন চলবে, লোকেরা খুব সহনশীল, তাই এতদিন সহ্য করে আছে। লোকের সহ্য ক্ষমতা আর কতদিন পরীক্ষা করবেন। ভালো যে, যে ধর্মকে নিয়ে এই ছবিটি সেই ধর্মের মানুষে এখনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি, শান্ত রয়েছেন। অবিলম্বে মনোজ মুনতাশিরকে মামলায় যোগ করুন। ফিল্ম সার্টিফিকেশন অথরিটি, যারা জনপ্রিয়ভাবে সেন্সর বোর্ড নামে পরিচিত, তাঁরা কি তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এই ধর্মের মানুষেরা ছবিটি দেখে কোনো ক্ষতি করেনি। ভগবান হনুমান এবং সীতার সব অংশ অবিলম্বে মুছে ফেলা উচিত অবিলম্বে। এই ধরনের চলচ্চিত্র দেখা খুবই কঠিন।”
সেন্সর বোর্ড এটি সম্পর্কে কী করেছে তা নিয়ে অবিলম্বে সেন্সর বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দের জবাবদিহি করার আদেশ দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। যদিও ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, ইতিমধ্যেই ছবিটি থেকে আপত্তিকর সংলাপগুলি সরানো হয়েছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বেঞ্চ আরও বলেছে যে, ‘এই ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ হলে একমাত্র রেহাই পাওয়া যাবে। স্বস্তি পাবেন হিন্দু ধর্মের মানুষ, যাদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছিল। লোকেরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখা বন্ধ করে দিয়েছে, ভাগ্য ভাল যে কিছু ভাঙচুর করেনি কেউ।’ নির্মাতাদের চরম তুলোধনা করেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ইতিমধ্যে যদি ছবির প্রদর্শনী বন্ধ না হয় তাহলে তাণ্ডব শুরু হতে পারে।