নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধ বার নয়। ১৫৫ বার। সাম্প্রতিক কালে তো বটেই স্মরণাতীতকালেও এত বেশি সংখ্যক আফটারস শক(Aftershock) বিশ্বের কোনও প্রান্তে কোনওদিন অনুভূত হয়েছে কিনা তা জোর গলায় কেউ বলতে পারছেন না। কিন্তু এটাই এখন চূড়ান্ত বাস্তব ভূমিকম্প এবং সুনামির জেরে বিধ্বস্ত জাপানের(Japan)। নতুন বছরের প্রথম দিনেই সোম দুপুরে জাপানে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প(Earthquake) অনুভূত হয়। তারপর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৫৫ বার কেঁপে উঠেছে জাপানের মাটি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রবল কম্পনের ভূমিকম্পের পরে অনেক আফটারস শক আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় আফটারস শক মূল ভূমিকম্পের থেকেও বেশি শক্তিশালী হয়। জাপানে সেই রকমের কিছু না হলেও ১৫৫ বার আফটারস শক অনুভূত হয়েছে যা রীতিমত বিরল। এই ঘটনা কার্যত আরও বড় কোনও বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর সেই বিপর্যয় জাপানের মধ্যে সীমিত থাকবে না। গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। প্রভাব পড়বে ভারত মহাসাগরের এলাকাতেও।
এদিন সকাল পর্যন্ত জাপান থেকে ১৫জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সেই হিসাবে দেখতে গেলে ভূমিকম্পের প্রাণহানীর ঘটনা খুবই কম। ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প যদি বিশ্বের অন্য কোথাও হতো তাহলে তার পরিণতি হতেই পারত তুরস্কের মতো। হাজারে হাজারে মানুষের মৃত্যু। ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক। তবে এই ভূমিকম্পের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ওয়াজিমা শহরটি(Wajima City)। কার্যত গোটা শহরটি ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই এখন প্রাণের সন্ধান চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। তাঁদের ধারনা মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। কেননা অনেক এলাকাতে তাঁরা এখনও পৌঁছাতেই পারেননি। একই আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন খোদ জাপানের প্রধানমন্ত্রী(Prime Minister of Japan) ফুমিয়ো কিশিদাও(Fumio Kishida)। তাঁর মতেও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। অনেকেই তার নীচে চাপা পড়ে আছেন।
তবে সোম দুপুর থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত মৃদু এবং মাঝারি মাত্রার কম্পনে ১৫৫ বার জাপানের কেঁপে ওঠার ঘটনা সে দেশের মানুষদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ধাক্কা দিয়েছে সুনামির(Sunami) আতঙ্কও। এখন পর্যন্ত জাপানে আফটারস শকের মাত্রা রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৬ রেকর্ড হয়েছে। অন্য কম্পনগুলির অধিকাংশেরই মাত্রা ৩ বা তারও কম। আর তা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞি মনে করছেন, ৩ এর ওপরে যে কম্পনগুলি অনুভূত হচ্ছে সেগুলি আদতে আফটারস শকই নয়। সেগুলিও কার্যত এক একটি ভূমিকম্প। গতকালের মূল ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল হনসু দ্বীপের ইশিকাওয়া। কিন্তু তারপর যে বড় কম্পন গুলি অনুভূত হয়েছে তা আশেপাশের এলাকায় হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরে পরেই জাপানের বেশ কয়েকটি উপকূল এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি হয়। আশঙ্কাকে সত্যি করে সে দেশের পশ্চিম উপকূল সংলগ্ন একাধিক শহরে ফুঁসে ওঠে সমুদ্র। কোথাও কোথাও ঢেউয়ের উচ্চতা ৪ ফুট পর্যন্ত উঠে যায়। সেই সুনামিতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জাপানের উত্তরপ্রান্তে থাকা নোটো উপদ্বীপে(Noto Isle)। সেখানে এখনও পৌঁছাতেই পারেনি উদ্ধারকারী দল। সামগ্রিক ভাবে ভূমিকম্পের জেরে এখনও পর্যন্ত জাপানের প্রায় ৩৩ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো যায়নি। ভাঙা রাস্তা ধরে এগোতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে উদ্ধারকারী দল এবং সেনাকেও। অন্তত এক হাজার মানুষকে সেনা শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিন ভোরে জরুরি বৈঠকে বসে দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশিদা।