নিজস্ব প্রতিনিধি: অযোধ্যার(Ayodhya) বুকে তৈরি হচ্ছে রামমন্দির(Rammandir)। সেখানে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র, মা সীতা ও ভাই লক্ষ্মণের মূর্তি ছাড়াও থাকবে শিশু অবস্থার রামচন্দ্রের একটি মূর্তিও। সেই মূর্তিকে সবাই ‘রামলালা’(Ramlala) বলেই ডাকেন। আর এই দুটি মূর্তি তৈরি করার জন্য নেপাল(Nepal) থেকে আসছে দুটি বৃহৎ আকারের কষ্টিপাথর(Kasthi Pathar) যাদের একটির বয়স সাড়ে ৬ কোটি বছর অন্যটির ১ লক্ষ বছর। প্রথমটির ওজন ২৭টন ও দ্বিতীয়টির ওজন ১৪ টন। নেপালের মায়াগদি জেলার বেনি থেকে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পূজার্চানার মধ্য দিয়ে সেই পাথর দুটি ট্রাকে করে রওয়ানা দিয়েছে ভারতের পথে। রাস্তায় অজস্র মানুষ সেই দুটি পাথরকে দর্শন ও পূজার্চনা করছেন নানা জায়গায় ট্রাক দুটিকে দাঁড় করিয়ে। কেননা এই দুটি পাথর কোনও সাধারণ পাথর নয়, বরঞ্চ তা হল শালগ্রাম শীলা যা ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক হিসাবেই হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে ও মন্দিরে পুজিত হয়।
সীতা ছিলেন মিথিলার রাজা জনকের কন্যা। সেই মিথিলা এখন নেপালে। নেপালের জনকপুকেই রামায়ণের মিথিলা বলে চিহ্নিত করা হয়। সেই হিসাবে রামচন্দ্রের শ্বশুরবাড়ি হল নেপাল যা কিনা বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র। সেই নেপালের প্রতিবেশী ভারতের বুকে রামচন্দ্রের নিজ শহর অযোধ্যার বুকে তাঁরই মন্দির নির্মীত হচ্ছে তখন নেপালই বা হাত গুটিয়ে বসে থাকে কীভাবে। যতই হোক জামাই বলে কথা। রীতি বলছে জামাইয়ের নতুন বাড়ি হলে সেখানে শ্বশুরবাড়ি থেকেও কিছু না কিছু দিতে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই নেপালের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি মাস ৭ আগে রাম মন্দির নির্মাণ ট্রাস্টের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন জামাইয়ের বাড়ি নির্মাণের এই কাজে নেপালেরও অংশীদ্বারিত্ব স্বীকার করে নিতে। নাহলে জামাইয়ের কাছে মাঠা হেঁট হয়ে যাবে শ্বশুরবাড়ি মিথিলার। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল ট্রাস্ট। তাতে সায় ছিল ভারত সরকারের(India Government) পাশাপাশি হিন্দু স্বয়ংসেবক সংঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরও। সেই সন্মতির পরে নেপাল সরকার জানিয়েছিল রামলালা ও রাম-লক্ষ্মণ-সীতার যে মূর্তি অযোধ্যার মন্দিরে স্থাপিত হবে সেই মূর্তি দুটি নির্মাণের জন্য কষ্টিপাথর পাঠাবে তাঁরা। এখন সেই পাথরই ট্রাকে চেপে আসছে নেপাল থেকে অযোধ্যার বুকে।
নেপালের মিথিলায় বিয়েতে মেয়েদের কিছু দেওয়ার প্রথা নেই। কিন্তু বিয়ের পরও যদি মেয়ের বাড়িতে কোনও শুভকাজ করা হয় বা কোনও উৎসব উদযাপন করা হয়, তাহলে আজও মাতৃগৃহ থেকে কিছু না কিছু সেখানে দেওয়া হয়। প্রতিটি উত্সব এবং শুভ কাজে কোনও না কোনও বার্তা কোনও না কোনও আকারে দেওয়া হয় আজও। সেই রীতি মেনেই নেপাল কষ্টিপাথর পাঠাচ্ছে অযোধ্যায়। এই কষ্টিপাথর কিন্তু সামান্য কোনও পাথর নয়। এই পাথরের ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব রয়েছে। সেই পবিত্র পাথরটি নেপালের মায়াগদি জেলার বেনি থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। সেখান দিয়ে বয়ে যাওয়া কালীগন্ডকী নদী থেকে নেওয়া। নেপালের এই নদী থেকেই শালিগ্রাম পাথর পাওয়া যায়, যার বয়স কোটি বছর, যা শুধুমাত্র এখানেই পাওয়া যায়। শালিগ্রাম পাথরকে ভগবান বিষ্ণু রূপে পূজা করা হয়, যার কারণে একে দেবশীলাও বলা হয়। সেখান থেকে পাথর তোলার নির্দিষ্ট কিছু নিয়মও রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই ভারত ও নেপাল সরকার প্রত্নতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, পুরোহিত, পণ্ডিতদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটিই মাটি পূজন করে, ক্ষম্না প্রার্থনা করে সেই পাথর খুঁকে বের করে এবং তারপর যথা বিহীত পূজার্চণার মধ্যে দিয়ে তা ট্রাকে তুলে ভারতের উদ্দেশ্যে সড়কপথে রওয়ানা করে দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসেই তা অযোধ্যায় পৌঁছে যাবে।