নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে হাতিয়ার করে বিজেপি(BJP) ভোটে জেতার চক্রান্ত করছে, তাই দেশের ৪ কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রধানদের বদলি করতে হবে। এই দাবি তুলেই গতকাল অর্থাৎ সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের(TMC) ১০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। কমিশনের কাছে অভিযোগ এবং দাবি জানিয়ে বাইরে এসে ধর্নায় বসেন তাঁরা। সেই ধর্না জোর করে তুলে দিয়ে পুলিশ তৃণমূল নেতাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেই ঘটনার জেরে গতকাল রাতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) নেতৃত্বে তৃণমূলের ১১ জন নেতা-নেত্রী রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে। রাজভবন(Raj Bhawan) থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দিল্লির ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনকেই দোষ দেন অভিষেক। অভিযোগ করেন, কমিশন মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিয়েছে। কেন তিনি এ কথা বলছেন, তার যুক্তিও দেন। পাশাপাশি, জানিয়ে দেন, পদক্ষেপ না করা হলে রাজ্যপালের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতেও এসে দেখা করবেন তাঁরা। তার আগেই মঙ্গলবার দুপুরেই রাজভবনে চলে গেল অভিষেকের চিঠি। সেই চিঠিতে তৃণমূলের তোলা সমস্ত অভিযোগ নথিভুক্ত করে তা বিস্তারিত আকারে লেখা হয়েছে।
অভিষেকের চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের কোন কোন কার্যকলাপে তৃণমূল আপত্তি তুলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে বলেই জোড়াফুল সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে হাতিয়ার করে বিজেপি ভোটে জেতার চক্রান্ত করছে বলেও চিঠিতে অভিষেক দাবি করেছেন। চিঠিতে অভিষেক মূলত ৫টি বিষয় তুলে ধরে লিখেছেন, প্রথমত, কী করে NIA, ED, CBI এবং আয়কর দফতরকে বিজেপি ব্যবহার করছে। দ্বিতীয়ত, NIA’র SP ধনরাম সিংয়ের সঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি গোপন বৈঠক করেছেন। অভিষেকের দাবি, বৈঠকে তৃণমূল কর্মীদের বেআইনি ভাবে নিশানা করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৃতীয়ত, বার বার তৃণমূল অভিযোগ করলেও তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা। চতুর্থত, দিল্লিতে প্রতিবাদরত তৃণমূল নেতাদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ বেআইনি ভাবে আটক করে রাখা। এবং পঞ্চমত, মানবিকতার খাতিরে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত এলাকার মানুষের ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য তহবিল মঞ্জুর করার প্রয়োজনীয়তা। অভিষেক চিঠিতে লিখেছেন, এই বিষয়গুলি সঠিক ভাবে পালিত না হলে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। তাই রাজ্যপাল যেন এ বিষয়ে যথোচিত পদক্ষেপ করেন।
অভিষেকের দাবি, রাজ্যপাল যেন কমিশনকে নির্দেশ দেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাতে জরুরি তহবিল থেকে ঘূর্ণিঝড়ে প্রভাবিত মানুষদের স্বার্থে অর্থ প্রদান করতে পারে। এ ছাড়াও, NIA, ED, CBI এবং আয়কর দফতরের ডিরেক্টরকে বদল, NIA’র SP ধনরাম সিংহকে অন্যত্র বদলির দাবিও তুলেছেন অভিষেক। একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় এজেন্সি ভোটের মুখে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যাতে কোনও পদক্ষেপ করতে না পারে, তা-ও নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন অভিষেক। এদিকে দিল্লিতে মন্দির মার্গ থানা কর্তৃপক্ষ এদিন সকাল থেকে বার বার মাইকে ঘোষণা করছে, থানা চত্বরে অবস্থানকারী তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা মুক্ত। তবুও দুপুর গড়াতে বন্ধ ফটকের ওপার থেকেই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন দোলা সেন-ডেরেক ও’ব্রায়েনরা!
দোলা জানান, ‘আমাদের দু’জন সাংসদ, নাদমুল হক এবং সাগরিকা রাতভর থানায় থাকার পরে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু গেট বন্ধ করে তাঁদের আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেউ বেরোলে তিনি ঢুকতে পারবেন না। যারা ভিতরে আছেন, তাঁরা বেরোতে পারবেন না। বুঝুন অবস্থা। দলে তিন জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন। তা সত্ত্বেও ফৌজদারি দণ্ডবিধির কোন ধারায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আটকে রাখা হল, তা জানতে চাইছি আমরা। বলা হচ্ছে, আমরা স্বতন্ত্র বা মুক্ত। দিল্লি পুলিশ নাটক করে মাইকে ঘোষণা করছে, মুক্তি দেওয়া হলেও আমরা নাকি বিনা কারণে থানায় রয়েছি। কিন্তু থানার গেট বন্ধ। সাংসদদের তো ডানা নেই। যে উড়ে বন্ধ গেটের ওপারে চলে যাবেন।’