নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের শ্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। সেই খেলায় গোহারান হেরেছে বিজেপি(BJP)। কিন্তু খেলা যে এখনও শেষ হয়ে যায়নি সেটা বঙ্গ বিজেপির বর্তমান হতশ্রীময়, লণ্ডভণ্ডময়, বিদ্রোহময় পরিস্থিতি নিত্যদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির ওপর থেকে নীচুতলার নেতাকর্মীরা। বিদ্রোহে বিদ্রোহে কার্যত বঙ্গ বিজেপি এখন বহুধা ধারায় ভাগ হয়ে গিয়েছে। এবার সেই বঙ্গ বিজেপির তো বটেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘুম কেড়ে নিতে চলেছেন ব্যারাকপুরের(Barracpur) বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং(Arjun Singh)। কেননা তিনি হুঙ্কার দিয়েছেন বাংলার মাটিতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামার, আন্দোলন শুরু করার। তাঁর সেই হুঙ্কারেই এখন কপালে ভাঁজ পড়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের।
ঠিক কী হয়েছে আর অর্জুনই বা কী জানিয়েছেন? জানা গিয়েছে, অর্জুনের ক্ষোভ কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের(Piyush Goyal) বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাংলার পাটচাষি এবং চটকল শ্রমিকদের দুরবস্থা দেখেও কিছু করছে না। একই সঙ্গে তাঁর ক্ষোভ রয়েছে মোদি(Narendra Modi) সরকারের কাজকর্ম নিয়েও। তাঁর অভিযোগ, যে বাংলা মোদিকে ১৮জন সাংসদ দিয়েছেন, ৭৭জন বিধায়ক দিয়েছেন, সেই বাংলার জন্য কিছুই করছে না মোদি সরকার। আর তাই তিনি এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার মাটিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবেন। অর্জুন জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের ১৪টি জুট মিল বন্ধ। আরও ১০টি বন্ধের মুখে। জুটমিল শ্রমিক, পাটচাষি এবং তাঁদের পরিবার মিলিয়ে আড়াই কোটি মানুষ চরম সঙ্কটে। কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রকে বহুবার আবেদন করেছি। চিঠি লিখেছি শিল্প–বাণিজ্য মন্ত্রকে। কিন্তু কেন্দ্র কর্ণপাতই করেনি। এবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই। আমার রাজনৈতিক উত্থান, কর্মকাণ্ড—সবই জুটমিল কর্মীদের ঘিরে। আমি আগে তাঁদের স্বার্থ দেখব। কোন দল, কোন সরকার কী মনে করল, আমার কিছু যায় আসে না।’
এখানেই শেষ নয়। অর্জুন আরও জানিয়েছেন, ‘আজ আমি যা হয়েছি সেটা মানুষের জন্য হয়েছি। নিজেও চটকলের শ্রমিক ছিলাম। আজ তাঁদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। ফলে দাবি না মানলে ছেড়ে কথা বলব না। এছাড়া আর অন্য কোনও পথ নেই। বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় রয়েছে, অথচ বাংলার মানুষের জন্য কিছুই করছে না। রাজ্যের পাটচাষি এবং চটকল শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে বসে আছেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। কাঁচা পাটের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না বদলালে আন্দোলনে নামতে হবে। বাংলার মানুষের দাবিদাওয়া বার বার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সাড়া না পেলে জুন মাসের মধ্যেই বড় সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারি। যদি মানুষই আমার সঙ্গে না থাকেন, তা হলে কীসের দল? আসলে বিজেপি সরকার, আর মন্ত্রকে বসে থাকা লোকেরা আকাশপুত্র। আকাশেই বিচরণ করেন। তাঁরা ধরিত্রীপুত্রদের সমস্যা, দারিদ্র্য বা জীবিকার সঙ্কট বুঝবেন কীভাবে?’
অর্জুনের এই বিস্ফোরক সিদ্ধান্তের জেরে অনেকেই মনে করছেন অর্জুন আদতে দুটি কাজ করছেন সমান্তরাল ভাবে। এক বিজেপি বাংলায় ক্রমশ রসাতলে তলিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি নিজে এখন বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছেন। আর দুই, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ভাবে চলে গিয়েছে সেটা বুঝেই নিজের জনসমর্থন বাড়াতে পাটকল শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথ নিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে হয়তো তৃণমূলের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব কমাতে চাইছেন তিনি। কেননা এখন মোদি সরকার নিয়ে তিনি যতটা ক্ষুব্ধতা দেখাচ্ছেন তত ক্ষোভ কিন্তু তিনি আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেখাচ্ছেন না। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে তিনি কী তাহলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। সেই জল্পনা যে অমূলক নয় সেই ইঙ্গিত কিন্তু উস্কে দিয়েছেন অর্জুন নিজেই। তিনি জানিয়েছেন, কাঁচা পাটের দাম আর রাজ্যের পাটকলগুলির সমস্যা জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখবেন। রবিবার রাতে দিল্লি গিয়েছেন অর্জুন। এদিন কেন্দ্রীয় জুট বোর্ডের বৈঠকে তিনি অংশও নেন। সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পীযূষ গোয়েলকে একটি চিঠিও দিয়েছেন তিনি। তাতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আগামী সাতদিনের মধ্যে আপনার পক্ষ থেকে কাঁচা পাটের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে মানুষের পাশে থাকার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’