নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনের(Loksabha Election 2024) দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ বাংলার(Bengal) এখনও ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টি কেন্দ্রে প্রার্থীই দিতে পারেনি কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি(BJP)। অথচ এরাই মুখে বাংলায় বিপ্লব ঘটাবার কথা বলছেন। কখনও ২৫, কখনও ৩৫ আসন জেতার খোয়াব দেখাচ্ছে। ডায়মন্ডহারবার(Daimond Harbour) এবং আসানসোল, এই দুই কেন্দ্রে এখনও বিজেপির প্রার্থী কে সেটাই জানা যাচ্ছে না। মুখে বড় বড় কথা, অথচ ভোটের মাঠে লড়াই করার নাই নেতা। নেই দমও। এখনও ডায়মন্ডহারবারে প্রার্থীই ঘোষণা করতে পারেনি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আর আসানসোলের ঘোষিত পদ্মপ্রার্থী নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি সেখান থেকে লড়াই করছেন না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই আসনের জন্য বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না কেন? ক্রমাগত আস্তিন গোটানোর পরেও অভিষেকের গড়ে বিরোধীদের প্রার্থী খুঁজে পেতে এত টালবাহানা কীসের? আসানসোল ঘিরেই বা এত নৈশব্দ কেন?
আসলে ঘটনা হচ্ছে, বাংলায় এখনও বিজেপি বহিরাগত হয়েই থেকে গিয়েছে। অন্ধ তৃণমূল তথা মমতা বিরোধীরা তাঁদের কিছুটা হলেও গ্রহণ করলেও আম বাঙালি নৈব নৈব চ। আর তাই মুখে যতই বাংলা দখলের কথা বলে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দলের নেতাকর্মী আর সমর্থকদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করুন না কেন বাস্তবে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) বা তৃণমূলকে টক্কর দেওয়ার মতো এখনও প্রস্তুতই নয় বঙ্গ বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টক্কর দেওয়ার কথা নাহয় বাদ দিয়েই দিলাম। বাংলায় বিজেপির না আছে প্রার্থী, না আছে বুথওয়াড়ি সংগঠন। রাজ্যে ৮০ হাজার ৫৩০টি বুথ রয়েছে। কিন্তু তার অর্ধেক বুথে আজও বিজেপির কোনও সংগঠন নেই। উনিশে যে ১৮টি আসনে এসেছিল, অস্বীকার করার উপায় নেই সেখানে কিছুটা হলেও মোদি জাদু কাজ করেছিল। কিন্তু সেই জাদু আর কাজে দেয়নি একুশের ভোটে। বরঞ্চ সেখানে ছড়ি ঘুরিয়েছেন দিদি। আর এখন এই ২৪’র ভোটে বিজেপির লড়াই না জেতার, না ধরে রাখার। বরঞ্চ বলা উচিত হারার লড়াই লড়তে নেমেছে বিজেপি। জেতা আসন কত ব্যবধানে হারা যাবে সেটাই নির্ধারিত হতে চলেছে ২৪’র ভোটে। আর তাই কেউ প্রার্থীও হতে চাইছে না।
আকাশ কাঁপানো হুঙ্কারের পরও বিজেপি যেমন ডায়মন্ডহারবারে যোগ্য প্রার্থীর তালাশ চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গ বিজেপির সূত্রে খবর, ডায়মন্ডহারবারের জন্য পদ্মের তরফে অনেককে প্রস্তাব দিলেও এখনও বিজেপির কেউই প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছেন না। ডায়মন্ডহারবারে ভোট একদম শেষ পর্যায়ে ১ জুন। বিজ্ঞপ্তি জারি হতে ঢের দেরি। শেষ পর্যন্ত বিজেপি কাউকে খুঁজে পেলেও তুল্যমূল্য লড়াই আদৌ হবে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। আর এই সব দেখে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি যে বাংলা দখলের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রচারে টেনে আনছে তাদের এত প্রার্থী সঙ্কট কেন? একাধিক জেতা আসনে পর্যন্ত প্রার্থী দিতে বিজেপি হিমশিম খেয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে সেই জোড়াফুল শিবির ভেঙে আসা দলবদলুদের ওপরেও ভরসা রাখতে হচ্ছে। এমনকি একেবারে রাজনীতিতে আনকোরা অনভিজ্ঞ লোকেদেরও ভোটের ময়দানে নামানো হয়েছে। বাংলায় বিজেপি যদি সত্যিই জেতার মতো অবস্থায় থাকে তাহলে ডায়মন্ডহারবার ও আসানসোলে প্রার্থী দিতে কেন পারছে না বিজেপি! রাজ্যজুড়ে তীব্র হয়েছে বিজেপির আদি-নব্য দ্বন্দ্ব। বহু কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ তো প্রকাশ্যে চলে আসছে। আসলে নিচুতলায় সংগঠন না থাকলে শুধু মোদির ছবি দেখিয়ে, আর গ্যারান্টি ফেরি করে যে ভোট বৈতরণী পার করা যাবে না, সেটা এখন বঙ্গ বিজেপির বহু পোড় খাওয়া নেতারাও মানছেন।