নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ছিল কার্যত ২৪’র লোকসভা নির্বাচনের আগে সেমি ফাইনাল রাউন্ড। রবি সকালের ট্রেন্ড বলছে, সেই সেমিফাইনাল রাউন্ডে অনেকটাই এগিয়ে গেল নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) বিজেপি(BJP)। ব্যাকফুটে কংগ্রেস(INC)। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই ফলাফলে বাংলার(Bengal) রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে? আরও বলা ভাল বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) লাভ লোকসান কী হতে চলেছে? ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, মমতার পাল্লা লাভ ও লোকসান দুইয়ের ক্ষেত্রেই কার্যত সমান সমান। এই নির্বাচনের ফলাফল বঙ্গ বিজেপিতে বেশ কিছুটা অক্সিজেন যোগাবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই অক্সিজেন নিয়ে বাংলার মাটিতে মমতার মতো মহীরুহের মোকাবিলা করা দ্বন্দ্বে দীর্ণ, জমিহারা বিজেপির পক্ষে কতখানি সম্ভব সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
মমতার লাভ কোথায়? বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার জন্য দেশে অবিজেপি এবং বিজেপি বিরোধী দলগুলি গড়ে তুলেছে মহাজোট INDIA। সেই জোটে প্রথম থেকেই মমতা এবং তৃণমূলের দাপট প্রতিষ্ঠিত। এদিনের কংগ্রেসী বিপর্যয় সেই দাপটকে আরও পোক্ত করল। কেননা কর্ণাটক বিধানসভায় জয়ের পর থেকেই কংগ্রেসি শিবিরের নেতারা একচেটিয়া ভাবে কংগ্রেসকেই এই জোটের মাথা হিসাবে তুলে ধরার পাশাপাশি রাহুল গান্ধিকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রজেক্ট করতে শুরু করে দিয়েছিল। তৃণমূল সহ অনেক জোট শরিকেরই সেটা পছন্দ ছিল না। কিন্তু প্রবল ভাবে কেউ তা নিয়ে কোনও প্রতিবাদও করেননি। সন্দেহ নেই এদিন কংগ্রেস গো-বলয়ের ৩ রাজ্যে জয়ের মুখ দেখলে INDIA জোটে কংগ্রেসের প্রভাব ও প্রতিপত্তিই সব থেকে বেশি প্রতিষ্ঠিত হতো। সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে। আবার মমতা চেয়েছিলেন পুজোর আগেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন বন্টনের আলোচনা সেরে ফেলতে। সেটাও শোনেনি কংগ্রেস। এখন INDIA জোটে মমতার তৃণমূলই দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। জোটে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও মমতাও উঁচুতে উঠে গেলেন। কেননা কংগ্রেসের পক্ষে আর সম্ভব হবে না মমতাকে উপেক্ষা করার।
মমতার লোকসান কোথায়? ৩ রাজ্যে বিজেপির জয় বাংলার মাটিতে শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারদের যতটা না অক্সিজেন দিয়েছে, তার থেকে ঢের বেশি অক্সিজেন দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। আর তার জেরেই বাংলার মাটিতে আগামী কয়েক মাসে বিজেপির প্রতিপত্তি ও দাপট দুইই বাড়তে চলেছে, এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনকি বিজেপির যে সব সাংসদ ও বিধায়ক ফুল বদলের কথা ভাবছিলেন সম্ভবত তাঁরাও এবার একটু ভেবে দেখবেন তাঁরা জার্সি বদল করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে। তবে সব থেকে বড় চাপ আসতে চলেছে মমতার কাছে রাজ্যে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে। কেননা, আগামী দিনে রাজ্যের কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তৎপরতা অনেকটাই বাড়তে চলেছে। বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করা এইসব এজেন্সির হাতে আগামী দিনে বাংলার শাসক দলের আরও কিছু নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক বা সাংসদ আটক বা গ্রেফতার হলে সেখানে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে আরও চেপে ধরা হবে নানা প্রকল্পের আর্থিক হিসাব দেওয়ার জন্য। আরও বেশ কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়া হলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। আসতে পারে শতাধিক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও। এই চাপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আগামী দিনে ফেস করতেই হবে।