নিজস্ব প্রতিনিধি: সব লড়াই শেষ। শেষ হল ঐন্দ্রিলার কঠিন জীবন যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই। দুবার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হল না। মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তরুণ অভিনেত্রী। টানা ২০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে অবশেষে রবিবার, ২০ নভেম্বর দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। এত মানুষের প্রার্থনাও ফেরাতে পারলনা ঐন্দ্রিলাকে। গতকাল প্রায় ১০ বার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি, তবুও যেন লড়াই চলছিল তাঁর। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না। হ্যাঁ, অভিনয়ের পরিধি তাঁর স্বল্প ছিল বটে, অনেক কিছু দেখানো বাকি ছিল হয়তো।
কিন্তু সবকিছু ফেলে রেখে চলে গেলেন মুর্শিদাবাদের এই লড়াকু অভিনেত্রী। তাঁর মাত্র কয়েকটি বছরে দিয়েছেন একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিক, ওয়েবসিরিজ। আর স্বল্প অভিনয়ের পরিসরেই তিনি রেখে গেলেন অনেক স্মৃতি, নিমেষেই গোটা বাংলার মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। শুধু অভিনয়ে নয়, নাচেও ছিলেন তিনি তুখোড়। সেই প্রমাণ একাধিকবার আমরা পেয়েছি। ক্লাস ১১ থাকাকালীন প্রথম ক্যান্সারে আক্রান্ত হন নায়িকা, এরপর সেই যুদ্ধে জিতে ফের ২০২১-এ ফের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি, যার ফলে ক্যামো থেরাপিতে চুল কেটে ফেলতে হয় তাঁর। তাও লড়ছিলেন, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে আগে আচমকাই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি, এরপর ভেন্টিলেশন, কোমা, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সবটাই নায়িকাকে একেবারে ঘিরে ধরে, শেষমেষ এতগুলো সংক্রমণ থেকে আর লড়ে উঠতে পারলেন না।
রবিবার হাওড়ার হাসপাতালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার। তাঁর এই যুদ্ধে লড়ছিলেন আরও একজন মানুষ। ‘প্রিয় বন্ধু’ সব্যসাচী চৌধুরী। যাঁর সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, তাঁকেই নিজের হাতে করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন সব্যসাচীকে। একাধিকবার নিজের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও আশ্বাস, ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনবেনই, কিন্তু কিছুই হল না। মৃত্যুর পরপারে ঢলে পড়লেন ঐন্দ্রিলা। চিকিৎসক অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর কলকাতার বাড়িতে।
সেখান থেকে স্টুডিওয়, সেখানে ঐন্দ্রিলাকে পড়ানো হয়েছে লিপস্টিক, গালে মেকআপ, অভিনেত্রী তাই সৌন্দর্য দানের মাধ্যমেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেওড়াতলা শ্মশানে। বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁর মরদেহ বের করা হয়েছে। প্রথমে ঐন্দ্রিলার দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর কুঁদঘাটের বাড়িতে। কুঁদঘাটের আইভরি টাওয়ারে থাকতেন ঐন্দ্রিলা। সেখান থেকে বিকেল ৫টা নাগাদ ঐন্দ্রিলার দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে। এরপর স্টুডিও থেকে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্যের জন্য। একেবারে সুন্দরী নায়িকার মতোই বিদায় জানানো হল ঐন্দ্রিলাকে। তাঁর বেঁচে থাকার এই রসদ হয়তো অনুপ্রেরণা হয়ে রয়ে যাবে আজীবন গোটা বাংলার কাছে।